গল্প - ভুলের ওপারে, লেখিকা - নাসরীন খান

 


ভুলের ওপারে 
নাসরীন খান (বাংলাদেশ)

পর্ব ১
সুরেশ্বর ঠাকুর এর বউ এর  একাদশ সন্তানের জন্মের খবর পাড়ায় ঘোষিত হলো জনে জনে।সে ময়রার দোকান থেকে মিষ্টি আনাল সকলকে খাওয়াবে বলে।সুরেশ্বর এর ডাক নাম সুরেশ। মিষ্টি নিয়ে এসে বসার ঘরের এক কোণে ময়রা টাকা নেয়ার জন্য বসে আছে। সুরেশ তাকে বললেন,  -সবুর কর ঘোষ পো আগে সন্তানের মুখটা দেখতে দাও তারপর তোমার মিষ্টি তুমি খেয়ে না হয় টাকা নিয়ে যেয়ো।হা হা হা
ভীষণ খুশি সে  এগারতম সন্তানটির জন্মের জন্য। তার বয়স চলছে ৫০।তার টাকা পয়সার অভাব নেই। দান দক্ষিণাও কম করেন না।মহল্লার প্রথম সারির বিত্তশালী বলা যায় তাকে। 

তারমেয়ে সন্তানের জন্ম হয়েছে।  স্ত্রী সাবিত্রী আর মেয়ে সুস্থই আছে সে খবর নিলেন ঘরের ভিতরে থাকা তার পিসির কাছ থেকে। পিসিকে বললেন, 
- আমাকে একটু মেয়ের মুখখানা দেখাও পিসি।তারপর সকলকে মিষ্টি খাওয়াব।

পিসি ভিতরে ঢুকে মেয়েকে নিয়ে আসল কাপড় পেঁচিয়ে। পিসির মুখে কোন আনন্দ নেই। 
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চাকরানি বিন্তির কাছে অনেকটা ছুঁড়ে দেয়ার মতন দিয়ে বলল,
_ সুরেশ, অমন মেয়ের জন্ম হয়েছে আমাদের বংশে! মাগো,  ভাবাই যায় না।

এই কথা শুনে সুরেশ এর মনটায় যেন একটা কামড় দিয়ে উঠলো। 
- বলছ কি পিসি?
সে নিজে কোলে না নিয়ে বিন্তির কোলের উপর থেকে চেয়ে দেখলো আসলেই তো!
দেখতে যেমন কালো হয়েছে তেমনি চেহারাটাও বোঁচা। 
আমার ঘরে এমন মেয়ের জন্ম? 
কোন্ সন্তানটি আমার এমন দেখতে হয়েছে আর।ওদের যেমন গায়ের রং তেমনি চেহারার অবয়ব ও নিখুঁত। 
মিষ্টি সব নিয়ে যা তোর দোকানে। আমি পুরো দাম ৩০০ টাকা দিয়ে দিচ্ছি তোকে।কাকে আমি খাওয়াবো ওসব? সবাই ছিঃ ছিঃ করবে যে!
এই বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন তিনি।ভিতরে নিয়ে গেলো বাচ্চাটাকে বিন্তি। অমনি সাবিত্রী বলল,
- বিন্তি ওকে তোর ঘরে নিয়ে তুইই পেলে পোষে বড় করিস।অমন কুৎসিত মেয়ের আমার দরকার নেই। হায় ভগবান!  এ তুমি আমাকে কি দিলে?

সেই থেকে বিন্তিই ওকে বড় করছে। 

বিন্তির ঘরটাতে একটা চৌকি আছে। ওখানে বিছানা করে বাচ্চাটাকে শুইয়ে দিয়ে ওর দিকে চেয়ে কেঁদে ফেলল।কি পাষাণ বাপ মা তোমার। সৃষ্টিকর্তা সইবে না এসব চোখে দেখে। গোয়ালা এসে গরুর দুধ দিয়ে গেলো। বাচ্চাটাকে শুইয়ে রেখে তার জন্য দুধ জ্বাল দিতে গেল।এভাবে বিন্তির তত্বাবধানে ও বড় হতে লাগলো। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ওর এখনো নাম রাখা হয় নি।বিকাল বেলা ঘর ঝাড়ু দিতে এসে বেগম সাহেবাকে বলল
- বেগম সাব,বাচ্চাটার একটা নাম রাখতে হবে  যে
- তোর যা খুশি ডাকিস।ওকে নিয়ে এত কথা বলিস না তো,কাজ কর মন দিয়ে। 

সন্ধ্যায় বিন্তি তার ঘরটিতে ঢুকল।বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিল। একটা চুমু খেল তারপর বলল, আজ থেকে তোমার নাম শিউলি। 

শিউলি এক বাড়িতেই বড় হচ্ছে। কিন্তু আলাদা, কাজের আয়ার কাছে। জীবনের শুরুটাই যার অবহেলা আর অবজ্ঞাতে ভরপুর। 
তার জন্য পৃথিবীতে আসার কোনই প্রয়োজন ছিল না। মাতৃহীন, পিতৃহীন,অনাথের যেমন কাটে তেমন।ওর বড় ভাই বোন গুলোও ওকে খেলতেও নেয় না ওদের সাথে। ও যেন অছ্যুৎ এক মানব শিশু। যাকে দেখলে, ধরলে অকল্যাণ হবে সকলের। অভিশাপ বয়ে বেড়ানো ঘৃণ্য কোন জঞ্জাল সে।যার তরে কোন ভালোবাসা বা দায়িত্ব নেই পরিবারের কারোর।

পর্ব ২

বিন্তি ওকে নিজের মেয়ের চেয়েও বেশি আদর আর স্নেহে বড় করে তুলছে। 

দেখতে দেখতে বেশ ৫ বছরের হয়ে গেছে। শিউলিকে স্কুলে দিতে হবে। বড় বাবুকে বিন্তি বলল,
- সাহেব!  ওকে তো স্কুলে পাঠাতে হবে। কোন স্কুলে দিব।
- তোর যেখানে খুশি দে গিয়ে, আমাকে জিজ্ঞেস করতে হবে না।
- স্কুলে দিতে গেলে তো বাবা, মায়ের নাম দিতে হবে। ওখানে কি লিখব সাহেব? 
- কি আর করা! জন্ম যখন দিয়েছি তখন তো আমাদের নামই দিতে হবে। 
বিন্তি পরদিন সকালে উঠে শিউলিকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় ভিতর বাড়িতে নিয়ে এসে গৃহকর্তীকে ডেকে বলল,
- মেয়েকে আশীর্বাদ করে দিন বেগম সাহেবা
- আশীর্বাদ লাগবে না।তুই নিয়ে যা।ও তোরই মেয়ে। তোকে তো দিয়েই দিয়েছি।
- শিউলির চোখ বেয়ে জল পড়ছে অনবরত। বিধাতা আমায় কেন কুৎসিত করে গড়লে যে নিজের মা'ই মেনে নিতে পারছে না? 
ছোট মনে কত কিছু ভাবছে। স্কুলে যাওয়ার পথে গাড়ি দেখতে পেল শিউলি। 
- বিন্তি মা! আমি যদি গাড়ির নীচে পরে মারা যাই।তোমাকে অনেক বকবে মা? তাই না?
- ও কথা মুখে এনো না মা।আমি কষ্ট পাই।তুই যে আমার মেয়ে!  শুনিস নি বেগম সাহেবা কি বলেছেন!

স্কুলে ভর্তি করার সময় গভর্নিং বডির একজন প্রশ্ন করল বিন্তিকে
- সাহেব  নিজে না এনে তোমাকে দিয়ে পাঠালেন কেন?
বিন্তির মুখে কোন রা নেই 
শিউলি জবাব দিল
- স্যার, আমি দেখতে কুৎসিত তো তাই তারা এলেন না।
জগন্নাত ঠাকুর হেডমাস্টার মহাশয় শিউলিকে কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, কই তুমি কুৎসিত?  কি মিষ্টি লাগছে তোমায়!

শিউলি স্যারের আদরে কেঁদে ফেলল।
ওর স্কুলে যাওয়া শুরু হলো।বাৎসরিক এ রেজাল্টও ভালো করছে। স্যাররা ভীষণ ভালোবাসে ওকে।সেজন্য ওর স্কুলে যেতে, পড়তে ভীষণ ভালো লাগে।
গায়ের রং কালো কিন্তু চোখ দুটো ডাগর ডাগর। যত বড় হচ্ছে ততই যেন চেহারায় জ্যোতি বাড়ছে। ওর বড় ভাই এর বন্ধু বিকাশ একদিন ডেকে বলল, তুমি কিন্তু দেখতে বেশ সুন্দর হয়ে উঠছো।
- কই,মা' তো এমন কথা বলে না আমায়?
- বলবে, ঠিক একদিন বলবে 
- তাই যেন হয় দাদা
দেখতে দেখতে অনেকটা বছর পেরিয়ে গেছে। শিউলি মাধ্যমিক পাশ করেছে।প্রথম বিভাগে পাশ করেছে। কিন্তু ওর রেজাল্ট এর দিন কোন মিষ্টি এলো না বাড়িতে। এদিকে গৃহকর্তা বেশ অসুস্থ হয়ে পরলেন। এভাবে রোগ ভোগের পর হঠাৎ একদিন সকালে তিনি দেহ ত্যাগ করলেন। 
বাবার লাশটি দেখতে গেল না একটি বারও শিউলি। বিন্তি বলল,তোমার বাবাকে শেষবারের মতন দেখতে যাবে না? 
- উনি আমার বাবা নয়,বিন্তি মা।
- ওমন বলে না 
- আমি যাব না।তুমি যাও।
বেগম সাহেবা জিজ্ঞেস করল বিন্তিকে 
- শিউলি এলো না?
- না, বেগম সাহেবা
- যেমন কুশ্রী চেহারা নিয়ে জন্মেছে,মনটাও ওমন কুশ্রী হয়েছে। 
- ওমন বলবেন না মা জননী 
এর বেশি আর কিছুটি বলতে পারল না বিন্তি। ওর ভয় বেশি বললে যদি ওকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়  তাহলে শিউলি বিপদে পরবে।
শিউলির এটা নিরব প্রতিবাদ। এটা সকলের অনুধাবন হলো।ওর উপর যেন সকলের রাগ আরও বেড়ে গেল।

পর্ব ৩

শিউলির উপর ওর জন্মদাত্রীর ক্ষোভ আরও বেড়ে গেল।পারেন না শুধু বাড়ি থেকে বের করে দিতে।
যাই হোক ওর পড়াশোনা বন্ধ। একদিন ডেকে এনে বললেন,  -তোমার আর পড়তে হবে না।এভাবেই থাক।

শুনে শিউলির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।সে অনেক বড় হতে চায় পড়াশোনা করে। তার সমস্ত ভালোলাগা, ভালোবাসা হলো বই।এখন সে কি করবে?  মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে পড়বে।সকালে ঘুম থেকে উঠে বিকাশ ওর ভাইয়ের ঘরে ঢুকতে যাবে এমন সময়
- দাদা!  তোমার সাথে কথা আছে। 
- কি কথা শিউলি?
- কি করে বলি!
কি যেন ভাবছে। বিকাশ বলল,
- কি ওমন ভাবছো? বলো?
- তুমি আমাকে বিয়ে করবে?  আমি অনেক পড়তে চাই। আমাকে পড়াবে?
- ঠিক আছে, মাকে গিয়ে বলি।তারপর দেখি মা কি বলেন।
- তাড়াতাড়ি জানাবে।এখানে আমার থাকতে আর ভালো লাগছে না।
- আমি বুঝতে পারছি। কাল তোমাকে বলি।
বিকাশ বাসায় গিয়ে মাকে বলায় মা এক কথায় রাজি হয়ে যায়।তিনি তো আর কতকিছু জানেন না।

পরদিন বিকাশ মাকে বলল। 

বিকাশ এর মা তাতে রাজি হয়ে যান।এ বাড়ির মেয়ে বলে কথা। যাই হোক বিয়েটা হয়ে যায় অল্প কদিন এর মধ্যেই।

বিয়ের দিন শিউলি ওর শাশুড়িকে জানায় যে সে আরও পড়তে চায়।
- পড়তে চাইলে পড়বে। তোমার মা,আমি দুজন মিলে পড়াব অসুবিধা কি?
- মা পড়াতে চায় না তাই আপনাকে বলছি 
- কেন?
বিকাশ ওর মাকে বলল,
- তেমন কিছু নয় মা।শিউলি এমনিই তোমাকে বলছে মা।
- কিছু যেন লুকচ্ছিস তুই। 
- কিছু না মা।
ভালোই কাটছে শিউলির এই জীবন। বিকাশ সকালে ব্যাবসার কাজে বেরিয়ে যায়।শিউলি ওর শাশুড়ির সাথে গল্প করে, কাজ করে এভাবে দিন যাচ্ছিল।বিকাশ একদিন ওকে এসে বলে
-কাল কলেজ যেতে হবে। তোমার ভর্তি করিয়ে দিব।শিউলি যার পর আর নাই খুশি। 
সকালে ঘুম থেকে উঠে দুজনেই রেডি হয়ে 
- মা, ওকে ভর্তি করতে নিয়ে যাচ্ছি। 
- কি দরকার পড়াশোনা করার।ওর মা যেহেতু চায় না। 
- মা,আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম পড়াব।
- ঠিক আছে তাহলে যা তোরা।
- শিউলি ফেরার পথে কিছু বই খাতাও কিনে আনে তার জন্য। সেলোয়ার-কামিজ পরে কলেজে যায় শাশুড়ি পছন্দ করেন না।বউ মানুষ!  সবসময় শাড়ি পরবে,সিঁদুর দিবে।এটাই তার শেষ কথা। শিউলিকে দেখতে ওর বাড়ি থেকে কেউ আসে না।শাশুড়ি এই নিয়ে নানা কথা বলেন।সব সহ্য করতে হয় শিউলিকে।মাঝে মধ্যে বাথরুমে গিয়ে কাঁদতে থাকে। 

একদিন দুপুরে বিন্তি কিছু মিষ্টি নিয়ে এ বাড়ি আসে শিউলিকে দেখতে। 
- তুমি একা এলে যে! আর কেউই আসল না?
- তারা অনেক ব্যাস্ত মাইজি।তাই আসতে পারে নাই। আবার আসলে ওদের নিয়া আসব।
- ঠিক আছে বুঝতে পারছি। মেয়েকে একলা ছেড়ে দিয়েছে।তোমার আর বলা লাগবে না।
- শিউলির চোখে পানি টলমল করছে। কিছু বলতে পারল না। 
এদিকে ওর ফাইনাল এক্সাম চলে আসলো দেখতে দেখতে।   তখব  ওর গর্ভে সীমান্ত। শাশুড়ি বলল
-ফরম ফিলআপ এর দরকার নেই। সামনের বছর পরীক্ষা দিবে। শিউলির হাসবেন্ড পরেছে মহা বিপদে।শিউলিকে ও বুঝাতে পারছে না, মাকেও না।মা কিছুতেই নাতির ক্ষতি করে পরীক্ষা দিতে দিবে না।তখন ওর ৭ মাস চলছে। ও রাগ করে বিন্তির কাছে চলে এলো।তবুও পরীক্ষা দিবে। 

পর্ব-৪

শিউলির জন্মদাত্রী রেগে আগুন। শিউলি মায়ের পায়ের উপর পরে গেল 
- আমাকে গ্যারেজ এর ঘরটাতেই থাকতে দাও কদিন এর জন্য। পরীক্ষা শেষ হলে চলে যাব।

শেষ পর্যন্ত অনুনয় বিনয় করে মাকে রাজি করানো গেলো।গ্যারেজের ঘরটায় ধূলো ময়লায় একাকার অবস্থা। বিন্তি আর শিউলি মিলে ঘরটা পরিস্কার করে নিল।সীমান্ত এর বয়স একমাস।এদিকে পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো।খেয়ে না খেয়ে মেয়েটা পরীক্ষা দিচ্ছে। বিন্তি যেটুকু সময় ও পরীক্ষা দিতে যায় সীমান্ত কে দেখাশোনা করে। এভাবে কয়েকটি পরীক্ষা হয়ে গেলো।
বিকাশ এলো কিছু বাজার নিয়ে। যাওয়ার সময় শিউলির হাতে শ পাঁচেক টাকা গুঁজে দিয়ে বলল,
- খরচ করো প্রয়োজনে।মা কে রাজি করাতে পারলে তোমাদের নিয়ে যাব।বিকাশ এর চোখে জল টলমল করছে। শিউলি ও কেঁদে ফেললো। কি আর করা তার কপালটাই খারাপ। নইলে এমন হয় কারো?
এভাবে সবগুলো পরীক্ষা শেষ করল শিউলি। তবে পরীক্ষা গুলো ভালো দিয়েছে ভেবে শান্তি পাচ্ছে। 

বিকাশ আবারও এলো।কিন্তু কোন আশার কথা শুনাতে পরল না।ওর মা অনড় এই বউকে আর ঘরে তুলবে না।
শিউলির রেজাল্ট বের হলো।অল্পের জন্য ফাস্ট ডিভিশন পায়নি।তবুও রেজাল্ট ভালো। 
এদিকে আর্থিক অনটন লেগে আছে। ওর মা কোন সাহায্য করে না,বিকাশও নয়।সব ভেবে ও তাদের পাড়ার স্কুলে তার কাগজপত্র জমা দেয়।যদি মাস্টার হিসেবে যোগ দিতে পারে।কদিন পর হেডমাস্টার মহাশয় শিউলিকে ডাকলেন।তাকে সামনের মাসে জয়েন করতে বললেন। যাক হাজার দুএক টাকা পাওয়া যাবে। তাই বা কম কিসে!

এভাবে দিন কাটতে লাগলো। একদিন এক লোকের মারফত খবর এলো বিকাশকে ওর মা আবারও বিয়ে দিয়েছে।এটা শোনে শিউলি কান্নায় ভেঙে পরলো।পরক্ষণেই স্থির করলো বিকাশকে ডিভোর্স এর কাগজ পাঠিয়ে দিবে সে।সেই মোতাবেক কাজ করলো।বিকাশদের বাড়ি থেকে কোন আপত্তি এলো না।সাইন করে সেই কাগজ পাঠিয়ে দিল শিউলিকে।শিউলি এদিকে ডিগ্রি পাশ করে হাইস্কুলে জয়েন করেছে। একটা ছোট দেখে বাসা ভাড়া নিয়ে মা ছেলের সংসার চলছে। বিন্তিও ওদের সাথে চলে এসেছে একেবারেই।দুইটা টিউশনি আর স্কুলের বেতন দিয়ে সংসার চলছে বেশ।দেখতে দেখতে বেশ কটি বছর পেরিয়ে গেলো।সীমান্ত ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেলো। খুশিতে মায়ের চোখে অঝোরে কান্না। এযে খুশিতে কান্না। শিউলি তার নিজের মায়ের সাথেও দেখা করতে যায় না।তারাও কেউ কখনো তার বাসায় আসে না। আধা কেজি মিষ্টি কিনে সীমান্তকে পাঠালো বিন্তির সাথে তার মায়ের বাসায়।নাতিকে দেখে এই প্রথম বার ওর মা জড়িয়ে ধরে আশীর্বাদ করলো।

দিনগুলো এভাবেই কেটে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় এটা ভেবে যে ছেলেটা বাবা কি জিনিস তা কখনো বুঝতে পারছে না।স্নেহ,ভালোবাসা যেটুকু পাওয়ার তা আমার কাছ থেকে পাচ্ছে। সারাদিন ব্যাস্ততায় কাটিয়ে দিতে হয়।একদিকে ভালো যে কোন ধরনের হতাশা কাজ করে না আমার মধ্যে। বিন্তি পিসি না থাকলে আমি একা সামলাতে পারতাম না সবকিছু। ও আমার জীবনে ভরসার জায়গা। ছেলেটা দেখতে দেখতে অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। স্কুলের পাঠ চুকিয়ে কলেজে ভর্তি হবে। 

আমার স্কুলের মায়না বেড়ে ২৫ হাজার হয়েছে। মা বেটার ভালো ভাবেই দিন চলে যাচ্ছে। এতদিনে একটু সঞ্চয়ও হয়েছে। কারণ ছেলে ইউনিভার্সিটিতে উঠলে কত খরচ হবে, কোথায় ভর্তি হবে সেই চিন্তায় কিছু জমাচ্ছি। 
ছেলেটা আমার ভীষণ লক্ষী হয়েছে। দুটো টিউশনিও করে। ছোট দুইটা বাচ্চা পড়ায়।তাতে ওর হাতখরচ হয়ে যায়। মায়ের কষ্ট বুঝতে পারে।ওর বাবা ভীষণ ভালো মানুষ ছিল। আমার প্রতি যত্নশীল ছিল কিন্তু ওর ঠাম্মার জন্য পারে নি।ছেলেটার মুখের দিকে তাকালে ওর বাবার কথা মনে হয় বেশি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url