মেলা- মিলনের মহা সম্মিলন, লেখক - মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল
মেলা- মিলনের মহা সম্মিলন
মজিবুর রহমান, প্রধানশিক্ষক, কাবিলপুর হাইস্কুল
মেলা শব্দের আক্ষরিক অর্থ মিলন। একটি নির্দিষ্ট স্থানে ও একটি নির্দিষ্ট সময়ে বহু মানুষের সম্মিলন। কোনো একটি উপলক্ষকে সামনে রেখেই এই সমাগম ঘটে। উপলক্ষটি হতে পারে ধর্মীয়, সামাজিক, বাণিজ্যিক অথবা সাংস্কৃতিক। যেকোনো উপলক্ষের একটি ইতিহাস ও ঐতিহ্য থাকে। এজন্য মেলা কোনো সাধারণ আয়োজন নয়, বিশেষ আয়োজন। মেলার একটা বাড়তি তাৎপর্য রয়েছে। উৎসব ও পার্বণের সাথে মেলার মিল অনেকটাই। সবেতেই রয়েছে একটা অনাবিল আনন্দের অনুভূতি। উচ্ছ্বাস উল্লাসের বহিঃপ্রকাশ। উপলক্ষ যাই হোক না কেন, উৎসব ও মেলার একটা সার্বজনীন রূপ সবসময়ই দৃশ্যমান থাকে। ধর্ম, বর্ণ, জাতপাত, নারী-পুরুষ ও ধনী-গরিব নির্বিশেষে বহু মানুষ মেলায় যায়, মেলামেশা করে এবং কেনাকাটায় অংশগ্রহণ করে। এর ফলে অজানাকে জানার ও অদেখাকে দেখার সুযোগ বাড়ে। একক মানুষ বহু মানুষের মাঝে নিজেকে উদ্ভাসিত করে। সমষ্টির সংলাপে সম্প্রীতির আবহ তৈরি হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, "প্রতিদিন মানুষ ক্ষুদ্র দীন একাকী। কিন্তু উৎসবের দিন মানুষ বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মানুষের সঙ্গে একত্র হইয়া বৃহৎ, সেদিন সে সমস্ত মনুষ্যত্বের শক্তি অনুভব করিয়া মহৎ।"
মেলার উদ্ভব কাল সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও এর প্রাচীনত্ব ও বিশ্বজনীনতা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। সব ভাষিক, রাষ্ট্রিক ও ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যেই মেলার প্রচলন রয়েছে। অতীতে জমিদার ও সামন্ত প্রভুরা মেলার আয়োজন বা পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। ১৮১০ সাল থেকে জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে অক্টোবরফেস্ট। রাজপরিবারের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এই উৎসবের সূচনা। ঘোড়দৌড় এই উৎসবের একটি প্রধান আকর্ষণ। নিউইয়র্ক মেলা শুরু হয় ১৮৩২ সালে। ১৮৫১ সালে লন্ডনের হাইড পার্কে প্রিন্স আলবার্টের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত হয় শিল্পকলা ও কারুশিল্পের বিখ্যাত ক্রিস্টাল প্যালেস প্রদর্শনী। এটাকেই প্রথম 'বিশ্বমেলা'র (ওয়ার্ল্ড'স ফেয়ার) স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এটা ভিক্টোরিয়ান যুগের (১৮৩৭-১৯০১) প্রতীক হিসেবে পরিচিত হয় এবং পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর পথ প্রস্তুত করে। এখন 'বিশ্বমেলা' বা বিশ্ব প্রদর্শনী পাঁচ বছর অন্তর ঘুরেফিরে নানান দেশে অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত ছ'মাস ধরে চলে। অলিম্পিক, ফুটবল বা ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলার মতো বিশ্বমেলায় বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব শিল্প, প্রযুক্তি , সংস্কৃতি ও উদ্ভাবন প্রদর্শন করে। ১৮৮৯ থেকে ১৯৩০-এর দশক পর্যন্ত সময়কালকে বিশ্বমেলার স্বর্ণযুগ বিবেচনা করা হয়। তবে এখনও বিরাট এলাকা জুড়ে বহু অর্থ ব্যয় করে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর নানা পণ্যসামগ্রীর আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক বা জাতীয় স্তরের মেলা অবিরাম আয়োজিত হয়ে চলেছে। সাধারণ মানুষ থেকে সরকার সকলেই মেলার আয়োজনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
মেলার সঙ্গে গ্ৰামীণ জনগোষ্ঠীর একটি নিবিড় সংযোগ লক্ষ্য করা যায়। মনে করা হয়, গ্ৰামীণ হাট থেকেই মেলার ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। গ্ৰামের মানুষের আপাত নিস্তরঙ্গ ও নীরস জীবন চর্চার মাঝে মেলা কয়েক দিনের জন্য এক ভীষণ মজাদার আয়োজন। বিকিকিনির সাথে আনন্দ ফ্রী। মেলার আগমনে গ্ৰামীণ জীবনে উৎসাহ উদ্দীপনা সঞ্চারিত হয়। অভাব-অনটন যতই থাকুক কেউই মেলার আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকতে চায় না। সেজন্য সকলেই মেলার জন্য ছোট খাটো বাজেট রাখে। বাহারি পণ্যের পসরা থেকে প্রত্যেকেই কিছু না কিছু কেনে। মৃৎশিল্প ও কারুশিল্পের সামগ্ৰীতে মেলা প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে। আট থেকে আশি সবার কেনার উপযোগী সামগ্ৰী মেলা সরবরাহ করে। শিশুদের জন্য মাটির তৈরি পুতুল, হরেক রকমের ঘুড়ি, নানান ধরনের খেলনা মেলায় মেলে। পাওয়া যায় গেরস্থালির জিনিসপত্র, রান্নাঘরের সরঞ্জাম। মেয়েদের মনিহারি, প্লাস্টিক পণ্য, বাঁশ-বেতের সামগ্ৰী, মনীষীদের ছবি কেনাকাটা করা হয়। রসনাতৃপ্তির বিপুল আয়োজন থাকে। মেলায় জিলিপি, রসগোল্লা, গজা, কদমা, বিন্নি ধানের খই, বাদাম, পাঁপড়ভাজা, দই-চিঁড়ার স্বাদই আলাদা। সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাকস। চাইনিজ ও দক্ষিণ ভারতীয় খাবার। পছন্দের ও প্রয়োজনের হরেকরকম জিনিসপত্র কেনাকাটার জন্য মেলার থেকে ভালো জায়গা আর কিছু হতে পারে না। মেলায় দর্শকদের মনোরঞ্জনের বিপুল আয়োজন থাকে। যে কেউ নাগরদোলা, পুতুলনাচ, কবিগান, জারিগান, কীর্তন, গম্ভীরা, যাত্রাপালা, ম্যাজিক, বায়োস্কোপ, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগ লড়াই, লাঠিখেলা উপভোগ করতে পারে। মেলায় বিকিকিনি ও আনন্দ উপভোগ দুটোই একসাথে হয়ে থাকে। নতুন ও রঙিন পোশাকে সজ্জিত মানুষের আনাগোনায় মেলার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। তবে গ্ৰামীণ মেলাকে ক্রমশ আধুনিক হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে। আবার নতুন করে শহুরে মেলাও সৃষ্টি হচ্ছে। কর্পোরেট সংস্থা মেলা স্পনসর করছে। কম্পিউটার, মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি'র মতো বিজ্ঞানের আশ্চর্য আবিষ্কারগুলো মেলার অঙ্গনে আসছে। কবিতা পাঠ, চিত্র অঙ্কন, নৃত্য, সঙ্গীত, নাটক, সেমিনার, সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান মেলার সাংস্কৃতিক আয়োজনের পরিসর বৃদ্ধি করছে।
জনসমাগমের নিরিখে ভারত তথা বিশ্বের সর্ববৃহৎ মেলা হল কুম্ভমেলা। দেড় মাস ধরে চলা এই মেলায় দেশ বিদেশের কয়েক কোটি পুণ্যার্থী আসেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই গুরুত্বপূর্ণ তীর্থযাত্রাটি নদীতে পবিত্র স্নানের মাধ্যমে পালিত হয়। কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয় প্রয়াগরাজ (গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর মিলন), হরিদ্বার (গঙ্গা), নাসিক (গোদাবরী) ও উজ্জয়িনীতে (শিপ্রা নদী)। সারা শরীরে ছাই মাখা নগ্ন নাগা সন্ন্যাসীদের উপস্থিতি এই মেলার একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
মেলা বাঙালির সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলার 'বারো মাসে তেরো পার্বণ'-এর সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে মেলা। বৈশাখ থেকে চৈত্র প্রতি মাসেই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে মেলা অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। বিস্তীর্ণ খোলা জায়গা, খেলার মাঠ, ক্লাব চত্বর, বটবৃক্ষ তলা, নদীর পাড়, পীর-ফকির বা সাধু-সন্ন্যাসীদের আস্তানা যে কোনো স্থানকেই কয়েক দিনের জন্য মেলা প্রাঙ্গণ বানিয়ে ফেলতে বাঙালির জুড়ি নেই। এবার বাংলার কয়েকটি বিখ্যাত মেলার কথা বলা যাক।
পৌষ মেলাঃ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর দীক্ষা উপলক্ষে ১২৫০ সনের ৭ই পৌষ একটি মেলার আয়োজন করেন। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তত্ত্বাবধানে শান্তিনিকেতনে মেলা অনুষ্ঠিত হতে থাকে। মেলার উদ্বোধনীতে তিনি ভাষণ দিতেন। একবার তিনি বলেছিলেন,"এই মেলার উৎসবে পল্লী আপনার সমস্ত সংকীর্ণতা বিস্মৃত হয়- হৃদয় খুলে দান করবার ও গ্ৰহণ করবার এই মেলাই হল প্রধান উৎস ও উপলক্ষ।''
গঙ্গাসাগর মেলাঃ গঙ্গাসাগর মেলা হল সাগর দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কপিল মুনির আশ্রমে প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত একটি মেলা ও ধর্মীয় উৎসব। হুগলি নদী (গঙ্গা) ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলকে বলা হয় গঙ্গাসাগর। এটি একদিকে তীর্থভূমি আবার অন্যদিকে মেলাভূমি। এই দুইয়ের মেলবন্ধনে আবদ্ধ গঙ্গাসাগর মেলা। ভক্তদের কাছে এই মেলার গুরুত্ব বোঝাতে বলা হয়- 'সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার'।
জয়দেবের মেলাঃ 'গীতগোবিন্দ' রচয়িতা জয়দেবের জন্মস্থান বীরভূম জেলায় অজয় নদের পাড়ে অবস্থিত কেন্দুলিতে প্রতি বছর মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে এই মেলা হয়ে থাকে। এই মেলায় বাউলদের উপস্থিতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বিষ্ণুপুর মেলাঃ মন্দির নগরী বিষ্ণুপুরে প্রতি বছর পৌষ মাসে অনুষ্ঠিত মেলায় বাংলার শিল্প, সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। উচ্চাঙ্গসংগীত ও ধ্রুপদী নৃত্যের প্রদর্শনী এই মেলার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটিকে ভারত সরকার জাতীয় উৎসবের স্বীকৃতি দিয়েছে।
রাসমেলাঃ রাসমেলা হল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রথাগত ধর্মীয় উৎসব যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তির নিদর্শন হিসেবে পালিত হয়। কার্তিক-অগ্ৰহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে বাংলা ছাড়াও মথুরা ও বৃন্দাবনে বিশেষ আগ্ৰহ ও উদ্দীপনার সাথে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। রাসমেলা রাসলীলা নামেও পরিচিত।
চড়ক মেলাঃ চড়ক মেলা বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ করে মেদিনীপুরে চৈত্র মাসের শেষ দিন বা চৈত্র সংক্রান্তিতে পালিত হয় যা মূলত শিবের গাজন উৎসবের একটি অঙ্গ।
পাথরচাপুরি মেলাঃ বীরভূম জেলার শতাব্দী প্রাচীন পাথরচাপুরি মেলায় দেশ বিদেশের বহু মানুষ ভিড় জমান। সুফি সাধক শাহ মেহেবুব বা দাতা সাহেব ১২৯৮ বঙ্গাব্দের ১০ই চৈত্র প্রয়াত হন।তাঁর স্মৃতিতে সেকদ্দার জমিদার খান বাহাদুর ১৯১৮ সনে এই মেলার সূচনা করেন।
রথের মেলাঃ আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা পালিত হয় এবং এই সময় বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। হুগলির শ্রীরামপুরে মাহেশের রথযাত্রা ও ওড়িশায় পুরীর রথযাত্রা বিখ্যাত। একটি কাজ করতে এসে দুই কাজ করে নেওয়া বোঝাতে প্রবাদ রয়েছে 'রথ দেখা কলা বেচা'।
বইমেলাঃ কলকাতা থেকে শুরু করে প্রতিটি জেলা কেন্দ্রে এমনকি মহকুমা শহরেও শীতের মরসুমে বইমেলা হয়ে থাকে। কলকাতা পুস্তকমেলার আন্তর্জাতিক খ্যাতি রয়েছে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলাঃ এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলোর অন্যতম। প্রতি বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও তৎসংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়।
আধুনিক জগতে ব্যস্ত জীবনে মানুষ নানাবিধ চাপ, দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা নিয়ে বসবাস করতে বাধ্য হয়। নিউক্লিয়ার পরিবারে নিঃসঙ্গতার শিকার হয়। হাসিঠাট্টা, গল্পগুজব, হৈ হুল্লোড় করার কেউ নেই। মেলা মানুষকে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠার সুযোগ করে দেয়। কয়েকটা দিন দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটনের কথা ভুলে থাকার রসদ যোগায়। ছোট বড় সকলেই হিসেব করে চলা রুটিনের বাইরে একটু বেহিসাবি হতে পারে। একঘেয়েমিতা কাটে। প্রাণশক্তি বাড়ে। মানসিক সংকীর্ণতা দূর হয়। বিভেদ ভুলে মন মিলনে উন্মুখ হয়। তাই মানুষ মেলার প্রতীক্ষা করে। মেলার আকর্ষণ ও আবেদন কখনও মলিন হয় না।
সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী শুভবুদ্ধিসম্পন্ন উদার মানুষেরা মনে করেন- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। এক ধর্মের মানুষের অন্য ধর্মের উৎসবে অংশগ্রহণ করতে কোনো বাধা বা দ্বিধা থাকবে না। মুসলমানদের উৎসবে অমুসলিমরা সামিল হবে আবার মুসলমানরা অমুসলিমদের উৎসবে মেতে উঠবে। মুসলমানদের নামাজ-রোজা ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ কিন্তু ঈদ-মহরম বৃহৎ পরিসরে উৎসব। অমুসলিমরা নামাজ-রোজা করবে না ঠিকই কিন্তু ঈদ-মহরমে আনন্দ করবে। হিন্দুদের দেবদেবীর মূর্তির সামনে মন্ত্র উচ্চারণ করে পূজা-অঞ্জলি প্রদান একান্তভাবেই ধর্মীয় ব্যাপার কিন্তু রথের মেলা দেখা কিংবা পুজোর প্যান্ডেল ঘোরা উৎসব। অহিন্দুরা অবশ্যই পূজা করবে না কিন্তু মেলা দেখে কিংবা প্যান্ডেল ঘুরে আনন্দ করবে। ২৫শে ডিসেম্বর গীর্জার মধ্যে যা হয় তা নিশ্চিতভাবেই ধর্মীয় বিধি কিন্তু গীর্জার বাইরের আয়োজন উৎসব। পয়লা বৈশাখ অথবা পয়লা জানুয়ারি কোনো বিশেষ ধর্মের মানুষের বছরের প্রথম দিন নয়। পঞ্জিকা অনুসারে একটি রাজ্যের অথবা রাষ্ট্রের সকল মানুষকে বছরভর কাজ করতে হয়। বহু ধর্ম ও সম্প্রদায়ের একটি রাষ্ট্রে অথবা সমাজে অসংখ্য মানুষের মিলেমিশে বসবাস করার জন্য বাস্তবসম্মত ও স্বাস্থ্যকর দৃষ্টিভঙ্গি গ্ৰহণ করা আবশ্যক। সম্প্রতি এক ধর্মের উৎসব অনুষ্ঠানে অন্য ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করার অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যারা ধর্মের ব্যাপারে ভীষণ গোঁড়া এবং অন্ধবিশ্বাসী তারা বলতে চায়- ধর্ম যার যার, উৎসবও তার তার। এরূপ ভাবনা নিশ্চিতভাবেই বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব থেকে উৎসারিত যা একতার উল্টো পথে চলতে পছন্দ করে। তারা ধর্মের বিশুদ্ধতা রক্ষার নামে মানুষের মধ্যে মিলনের বদলে বিচ্ছেদ চায়। বহুত্ববাদকে উপেক্ষা ও অস্বীকার করার এই অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে মেলার উদার ও বিস্তীর্ণ পরিসর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ধর্মীয় উৎসব বা মেলা থেকে রাজনৈতিক মুনাফা অর্জন করার কুৎসিত কৌশলও ব্যর্থ করা জরুরি। রাজনীতি ও ধর্মের মিশ্রণ অতি বিষম বস্তু, এব্যাপারে কোনো সংশয় নেই। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আত্মশক্তিতে আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে।

