প্রবন্ধ - দলিত কবি কাজী নজরুল ও 'গাহি সাম্যের গান', লেখক - ড. মনোরঞ্জন দাস

 


দলিত কবি কাজী নজরুল ও 'গাহি সাম্যের গান'

ড. মনোরঞ্জন দাস


           কাল ও সময় ধারার সংবাহনে কাজী নজরুল দলিত ঘরাণার সাহিত্যিক এবং বিপ্লবী ও বিদ্রোহী অংশের আধারবাহী ব্যক্তিত্ব। তিনি মৌলবীদের কুসংস্কারময় অত্যাচার এবং উচ্চ হিন্দুদের ধর্ম ময়   নির্মমতার বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন ও গর্জে উঠেছিলেন। তিনি লেখেন,


'গাহি সাম্যের গান-


মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান্।


নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,


সব দেশে সব কালে ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।–




‘পূজারী দুয়ার খোলো,


ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হ’ল!’


স্বপন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়,


দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়!


জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ


ডাকিল পান্থ’, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনি ক’ সাত দিন!’


সহসা বন্ধ হ’ল মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে,


তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে!


ভুখারী ফুকারি’ কয়,


‘ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’১



        কাজী নজরুল ইসলামকে পূর্বাপর অংশে  দলিত কবি বলাই যায়, তার কবিতায় দলিত এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি গভীর সহানুভূতি ও তাদের অধিকারের পক্ষে জোরালো প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে।

নজরুল তার লেখায় সমাজের শোষিত, বঞ্চিত এবং প্রান্তিক মানুষের কথা তুলে ধরেছেন এবং তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, যার কারণে তিনি 'দলিত বা প্রান্তজনের কবি' হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি লেখেন,


'মসজিদে কাল শির্‌নী আছিল, অঢেল গোস্ত–রুটি


বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটি কুটি,


এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে আজারির চিন্‌


বলে, ‘ বাবা, আমি ভূখা-ফাকা আমি আজ নিয়ে সাত দিন!’


তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মোল্লা-‘ভ্যালা হ’ল দেখি লেঠা,


ভূখা আছ মর গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?’


ভূখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল-‘তা হলে শালা


সোজা পথ দেখ!’ গোস–রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা!


ভুখারী ফিরিয়া চলে,


চলিতে চলিতে বলে-


‘আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,


আমার ক্ষুধার অন্ন তা ব’লে বন্ধ করনি প্রভু।'২


        সামাজিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের তীর্থে নজরুলের কবিতা, মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার, সামাজিক অনাচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন।  দলিত ও প্রান্তজনের প্রতি অঙ্গীকার, তিনি নিজের প্রান্তিক অবস্থানকে কখনো ভোলেননি এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি তার অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা সর্বদা প্রকাশ করেছেন। 'বড়র পিরিতি বালির বাঁধ', এই রচনার মাধ্যমে তিনি স্পষ্টভাবে নিম্নবর্গের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসার কথা জানিয়েছেন, যা তার 'প্রান্তজনপ্রীতি'র একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি লেখেন,


'তব মস্‌জিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী।


মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী!’


কোথা চেঙ্গিস্‌, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?


ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার!


খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?


সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা!


হায় রে ভজনালয়,


তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়!


মানুষেরে ঘৃণা করি’


ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি’ মরি’।৩




         বিদ্রোহী কবি, তার কবিতায় মূল উপজীব্য বিষয় হিসাবে ,অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ,  করেছেন, যার জন্য তাকে 'বিদ্রোহী কবি' বলা হয়ে থাকে। তিনি বিশেষভাবে সমাজের কিছু শ্রেনির মানুষের কাছ থেকে নিপিড়িত ও অত্যাচারিত হয়েছিলেন বলেই তার বিদ্রোহী সত্বা অগ্নিময়ে জাগরুক হয়েছিল। অনন্য উন্মাদনায় তাই তো তিনি মানুষের কবি, শোষিতের কবি, দলিতের কবি। তিনি লেখেন,




'ও’ মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ’ নাও জোর ক’রে কেড়ে,



যাহারা আনিল গ্রন্থ’-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে,


পূজিছে গ্রন্থ’ ভন্ডের দল! মূর্খরা সব শোনো,


মানুষ এনেছে গ্রন্থ’;-গ্রন্থ’ আনেনি মানুষ কোনো।




আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মাদ


কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর,-বিশ্বের সম্পদ,


আমাদেরি এঁরা পিতা-পিতামহ, এই আমাদের মাঝে


তাঁদেরি রক্ত কম-বেশী ক’রে প্রতি ধমনীতে রাজে!


আমরা তাঁদেরি সন্তান, জ্ঞাতি, তাঁদেরি মতন দেহ,


কে জানে কখন মোরাও অমনি হয়ে যেতে  কেহ।'৪



          দলিত বৃত্তে আসীন থেকে তিনি অদম্য সংগ্রামের অংশী ছিলেন সারাটা জীবন। 

তার অনুভবে অনুসারী হয়ে কবি ইলা দাস লেখেন,


'শোষণ পীড়ন অত্যাচারে নেই যে দেহে প্রাণ

ভোট যজ্ঞে গাইছে শোনো সাম্যবাদের গান।


অনেক ভেবে একটু বুঝে যেই করেছি পণ

সব রঙে ভাই জ্বলছে আগুন,কে যে আপনজন!


ঝান্ডা হাতে আওয়াজ তোলো,গতর খেটে বাঁচি

ধমকানি ও চমকানিতে ভোটের নাচানাচি।


দু'হাত ভরে নিচ্ছে লুটে, হাওয়ায় টাকা ওড়ে

শ্রমিক-মজুর কৃষকশ্রেনী খিদেয় মাথা ঘোরে।


মিথ্যে ভাষণ শব্দ দূষণ ভোটের জন্য আসে

ভোট ফুরোলেই সাকিনহারা,কেউ-বা পরবাসে।


নেতা-মন্ত্রী অষ্টপ্রহর চতুর্দোলায় ঘোরে

স্তাবকেরা সঙ্গে থাকে,দাবার ঘুঁটি বোড়ে।


ভোট মানেই লাশের পাহাড় শোকে বাতাস ভারী

জ্বলছে দ্যাখো মানুষগুলো  পুড়ছে হাজার বাড়ি।


বন্ধু সুজন ভোট-টা দিয়ে যেই ফিরেছে ঘরে

মুখটা বেঁধে নিয়ে গেছে,গভীর অন্ধকারে।


খোঁজ-খোঁজ পাইনি কোথায়ও আমার ভাইয়ের লাশ

হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকি গ্রামের চারপাশ।


শোষণ পীড়ন অত্যাচারে নেই যে দেহে প্রাণ

ভোট যজ্ঞে গাইছে শোনো সাম্যবাদের গান।'৫


      তিনি জীবন জোয়ার, জীবন  প্রত্যয়ের সর্বাংশে বিশিষ্টতা , অনন্যতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী সত্ত্বা হয়ে প্রকারে এবং প্রাকারে যেতেন এবং হতেন দংশনবাহী। অর্থনৈতিক প্রক্ষাপটে তিনি দলিত বৃত্তের ব্যক্তিত্ব তো ছিলেনই। তাছাড়া তার 'দুখু মিঞা' নামের মধ্য দিয়েই দলিতের প্রবাহ উৎসারিত হয়। তিনি লেখেন,


'হেসো না বন্ধু! আমার আমি সে কত অতল অসীম,


আমিই কি জানি-কে জানে কে আছে


আমাতে মহামহিম।


হয়ত আমাতে আসিছে কল্কি, তোমাতে মেহেদী ঈসা,


কে জানে কাহার অন- ও আদি, কে পায় কাহার দিশা?


কাহারে করিছ ঘৃণা তুমি ভাই, কাহারে মারিছ লাথি?


হয়ত উহারই বুকে ভগবান্‌ জাগিছেন দিবা-রাতি!


অথবা হয়ত কিছুই নহে সে, মহান্‌ উচ্চ নহে,


আছে ক্লেদাক্ত ক্ষত-বিক্ষত পড়িয়া দুঃখ-দহে,


তবু জগতের যত পবিত্র গ্রন্থ’ ভজনালয়


ঐ একখানি ক্ষুদ্র দেহের সম পবিত্র নয়।'৬


        কাজী নজরুল ইসলাম অবহেলিত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত, দলিত, জনপ্রিয় বাঙালি কবি। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবিও বটে। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে অগ্নিসাগর ও অগ্নস্ফুলিঙ্গও বলা হয়। তিনি চাষাভুষোদের দুঃখ-কষ্টে, কষ্ট পান এবং তা নিরসনে চেষ্টা করে গেছেন সারাটা জীবন। তিনি লেখেন,



'হয়ত ইহারি ঔরসে ভাই ইহারই কুটীর-বাসে


জন্মিছে কেহ- জোড়া নাই যার জগতের ইতিহাসে!


যে বাণী আজিও শোনেনি জগৎ, যে মহাশক্তিধরে


আজিও বিশ্ব দেখনি,-হয়ত আসিছে সে এরই ঘরে!


ও কে? চন্ডাল? চম্‌কাও কেন? নহে ও ঘৃণ্য জীব!


ওই হ’তে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব।


আজ চন্ডাল, কাল হ’তে পারে মহাযোগী-সম্রাট,


তুমি কাল তারে অর্ঘ্য দানিবে, করিবে নান্দী-পাঠ।


রাখাল বলিয়া কারে করো হেলা, ও-হেলা কাহারে বাজে!


হয়ত গোপনে ব্রজের গোপাল এসেছে রাখাল সাজে!


চাষা ব’লে কর ঘৃণা!


দে’খো চাষা-রূপে লুকায়ে জনক বলরাম এলো কি না!'৭


       নজরুলসাহিত্যে সমাজের বঞ্চিত-দলিত , নিম্নবর্গীয় পদদলিত জনগোষ্ঠীর কথাই তীব্র ও সাংঘাতিকভাবে উচ্চারিত হয়েছে। শোষিতজন হিসেবে নজরুল কখনো বিস্মৃত হননি নিজের অবস্থান এবং পরিমন্ডলের কথা। অত্যাচারিত হয়ে নিজ

   জনগোষ্ঠীর প্রতি গভীর সহানুভূতি ও তাদের অধিকারের পক্ষে জোরালো প্রতিবাদে দেখা যায় , কবি নজরুলের। তিনি রাখালিয়া অনুভবে আসীন হন আবার তিনি ভিখারীদের জীবনযন্ত্রণা দূর করতে প্রয়াসী হন। তিনি লেখেন,


'যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারাও ধরিল হাল,


তারাই আনিল অমর বাণী, যা আছে র’বে চিরকাল।


দ্বারে গালি খেয়ে ফিরে যায় নিতি ভিখারী ও ভিখারিনী,


তারি মাঝে কবে এলো ভোলা-নাথ গিরিজায়া, তা কিক চিনি!


তোমার ভোগের হ্রাস হয় পাছে ভিক্ষা-মুষ্টি দিলে,


দ্বারী দিয়ে তাই মার দিয়ে তুমি দেবতারে খেদাইলে।


সে মার রহিল জমা-


কে জানে তোমায় লাঞ্ছিতা দেবী করিয়াছে কিনা ক্ষমা!


বন্ধু, তোমার বুক-ভরা লোভ, দু’চোখে স্বার্থ-ঠুলি,


নতুবা দেখিতে, তোমারে সেবিতে দেবতা হ’য়েছে কুলি।'৮


      নজরুল তার লেখায় সমাজের পিছিয়ে পড়া বঞ্চিত এবং অর্ধভূক্ত এবং অভূক্ত ও ক্ষুধার্ত মানুষের কথা তুলে ধরেছেন এবং তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, যার কারণে তিনি 'দলিত বা দুঃখী জনের কবি' হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছিলেন। সর্বধর্ম, নিম্নবর্গ ও দলিতশ্রেণী এবং সম্প্রদায়গত  

অবস্থানে একাকারে থেকে তিনি উচ্চস্বরে প্রতিবাদী হতেন। তিনি লেখেন,


'মানুষের বুকে যেটুকু দেবতা, বেদনা-মথিত সুধা,


তাই লুটে তুমি খাবে পশু? তুমি তা দিয়ে মিটাবে ক্ষুধা?


তোমার ক্ষুধার আহার তোমার মন্দোদরীই জানে


তোমার মৃত্যু-বাণ আছে তব প্রাসাদের কোন্‌খানে!


তোমারি কামনা-রাণী


যুগে যুগে পশু, ফেলেছে তোমায় মৃত্যু-বিবরে টানি’।




গাহি সাম্যের গান-


যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান


যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্‌লিম-ক্রীশ্চান।


গাহি সাম্যের গান!


কে তুমি?- পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?


কন্‌ফুসিয়াস্‌? চার্বাক চেলা? ব’লে যাও, বলো আরো!


বন্ধু, যা-খুশি হও,


পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও,


কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক-


জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব প’ড়ে যাও, য্ত সখ-


কিন্তু, কেন এ পন্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?


দোকানে কেন এ দর কষাকষি? পথে ফুটে তাজা ফুল!


তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,

 

সকল শাস্র খুঁজে পাবে সখা, খুলে দেখ নিজ প্রাণ!


তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার,


তোমার হৃদয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার।'৯



        সামাজিক অবক্ষয় ও নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, অভব্যতার এবং মনুষ্যত্বের ওপর অবিচারে অধ্যায় নজরুলের  সাহিত্য সৃষ্টিতে উদ্ভাসিত। অশীতিপর, কষ্টবহনকারী মানুষের প্রতি নজরুলের  অঙ্গীকার যা  তিনি 'প্রান্তজনপ্রীতি' কবিতাতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসাবে চিত্রায়িত ও উপজীব্যিত করেছেন।


        সামাজিক অবক্ষয় ও নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, অভব্যতার এবং মনুষ্যত্বের ওপর অবিচারে অধ্যায় নজরুলের  সাহিত্য সৃষ্টিতে উদ্ভাসিত। অশীতিপর,  কষ্টবহনকারী মানুষের প্রতি নজরুলের  অঙ্গীকার যা  তিনি 'প্রান্তজনপ্রীতি' কবিতাতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসাবে চিত্রায়িত করেছেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম দলিত আবর্তে থেকে অত্যাচারী ও শোষক শ্রণীর সঙ্গে লড়াই করে গেছেন। তিনি লেখেন,


'কেন খুঁজে ফের’ দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি -কঙ্কালে?


হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!


বন্ধু, বলি নি ঝুট,


এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।


এই হৃদ্য়ই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,


বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম্‌ এ, মদিনা, কাবা-ভবন,


মস্‌জিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,


এইখানে ব’সে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।


এই রণ-ভূমে বাঁশীর কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,


এই মাঠে হ’ল মেষের রাখাল নবীরা খোদার মিতা।


এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা-মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি


ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি’।


এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহবান,


এইখানে বসি’ গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-গান!


মিথ্যা শুনিনি ভাই,


এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।'১০


         সারাৎসারে বলা যায়, কবি কাজী নজরুল ইসলাম সারাটা জীবন দলিত সংশ্লেষে

থেকে পূর্ণ সৈনিকের মতো সমাজের  অন্ধকার দূর করতে লড়াই করে গেছেন।


তথ্যসূত্র

* * ৫ নং তথ্যসূত্র শুধু ইলা 

* দাসের ; 

* আর সব তথ্যসূত্র, কাজী নজরুল  ইসলামের ' গাহি সাম্যে র 

* গান ' থেকে ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url