গল্প - দুঃস্বপ্ন, কলমে - মোঃ ইজাজ আহামেদ
দুঃস্বপ্ন
মোঃ ইজাজ আহামেদ
ঘড়িতে টুং টুং করে বাজছে সকাল দশটার ঘণ্টা। স্কুলে যাওয়ার জন্য হুমায়ূন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চিরুনি দিয়ে মাথা পরিপাটি করতে করতে জানালার বাইরে একবার চোখের পলক ফেলে; দেখে, আকাশ ঢেকেছে কালো চাদরে। তৎক্ষণাৎ সে তাড়াহুড়ো করে বাইক বের করে।
হুমায়ূনের স্কুল যাওয়ার পথ বাইকে মিনিট কুড়ির মতো। সাইকেলে যেতে তার ঘন্টাখানেক লাগত। তিন মাস আগে কিস্তিতে কিনেছে যাতে সময় বাঁচে, ক্লান্তি লাঘব হয় আর অতিরিক্ত টিউশনি ধরে আয় বাড়ানো যায়। যেমন ভাবনা, তেমনি কাজ। ভাবনা অনুযায়ী কাজকর্ম চলছে। মেঘময় আকাশ দেখতে দেখতে এগিয়ে যাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে স্কুল যেতে দেরি না হয়ে যায়। বেসরকারি স্কুল বলে কথা, সময়ে না ঢুকলেই মাইনে কাটা যায়। কোথা থেকে যেন দমকা বাতাসও এল। বাতাসের হাত ধরে কালো পোশাক পরা মেঘবালিকারা যেন কোনো অচিন দেশে যেতে লাগল। আকাশের মুখ থেকে যেন মন-খারাপ বিদায় নিল।
কয়েকজন পুলিশ বাইক আরোহী হুমায়ূনকে থামাল। তাদের মধ্যে একজন বলল, "গাড়ির কাগজ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখান।" আরেকজন গাড়ির নম্বর প্লেটের ফটো তুলল মোবাইলে। হুমায়ূন বলল, স্যার তাড়াহুড়ো করে কাগজের ব্যাগটি বাড়িতে রেখে চলে এসেছি। স্যার প্লিজ ছেড়ে দিন, আমার যেতে দেরি হয়ে যাবে। পুলিশ বলল, ঠিক আছে ছেড়ে দিচ্ছি মোবাইলে মেসেজ যাবে, ফাইন ভরে দিয়েন। বেচারার এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে, এইদিকে ফাইন আর ঐদিকে মাইনে কাটার ভয় তাকে গ্রাস করলো। তাই কথা না বাড়িয়ে তাড়াহুড়ো যেতে লাগল।
নদী ভাঙ্গনের দুঃস্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে হুমায়ূনের মনে। অব্যাহত নদীর ভাঙন একে একে গ্রাস করছে ভিটেমাটি। তার বাড়ি সহ কয়েকটি বাড়ি কোনমতে মাটির শিকড় আঁকড়ে ধরে রয়েছে। দূর থেকে মনে হয় যেন কয়েকটি নৌকো নোঙর করে আছে নদীর তীরে। শীঘ্রই অন্য কোথাও জায়গা কিনে থাকার মত ঠাঁই করতে হবে তাকে। সংসার চালানোর সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ বাবা-মায়ের জন্য ওষুধের টাকাও যোগাড় করতে হয় তাকে। সরকারি চাকরির আশায় এখনও বিয়ে করাও হয়ে উঠেনি। অবশ্য খুব একটা বেশি বয়সও হয়নি, বয়স ২৬-২৭ হবে। বৃষ্টি হলো না কিন্তু এখনো আকাশের মন খারাপ হুমায়ূনের মতো। কখন যে অশ্রু টপটপ করে ঝরে পড়বে কে জানে?
নদী ভাঙ্গনের আগে কত সুন্দর ছিল সোনালী দিনগুলো! নদীর কলকল ধ্বনি সে কান পেতে শুনতো। বাতাস জলে নৃত্য করত। ঢেউয়ের গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ত সে তা টেরই পেত না। জানালায় সূর্যের মিষ্টি রশ্মির উঁকি মারাতে তার ঘুম ভাঙত। রূপালি ভোর, জলে সূর্য-উদয়, সূর্যাস্ত, গোধূলি, জোছনা ভরা নিশি তার মনে কত আনন্দের জোয়ার নিয়ে আসত! সুর্য, চাঁদ, তারা, শরতের নীল আকাশ ও ফর্সা মেঘবালিকারা পানির দর্পণে মুখ দেখত। সে নদীর পাড়ে বসে গোধূলির আলো মাথায় নিয়ে জেলেদের মাছ ধরা দেখত। গোধূলির আলোয় প্লাবিত হতো চারিদিক। মৃদুমন্দ বাতাস আদর করে যেত দেহে। বর্ষা এলে খাবার থালায় থাকত রূপালি ইলিশ। এইসব ভাবতে ভাবতে স্কুলের সামনে চলে এসেছে সে। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখে ১০ মিনিট দেরি হয়ে গেছে।
©® মোঃ ইজাজ আহামেদ (©® Md Ejaj Ahamed)