অনুগল্প - জ্যোৎস্না মাখা এক রাস্তায়, কলমে - মোঃ ইজাজ আহামেদ

 



জ্যোৎস্না মাখা এক রাস্তায়
মোঃ ইজাজ আহামেদ

জ্যোৎস্না স্নাত আমুহা ঘাট। জ্যোৎস্না মাখা খেয়ানৌকায় পারাপার হচ্ছে দু'পারের মানুষজন। ঘাটে কিছু দোকান। তাই হয়তো এই নিরিবিলি পরিবেশে একটু কোলাহল শোনা যায় আর শোনা যায় ঝিঁঝিঁ পোকার সুর। নদীর তীর বরাবর চলে গেছে পিচের রাস্তা। রাস্তার দু'ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাছেরা। তাদের ডালপালা ছায়া বিস্তার করেছে রাস্তার উপর ছাতার মতো। গাছগুলো যেন পথিকদের স্বাগত জানাচ্ছে হাত নেড়ে। পাতার ফাঁক দিয়ে উঁকি মারছে মুখে স্মিত হাসি নিয়ে পূর্নিমা চাঁদ। খিল খিল করে আপন মনে হেসে যাচ্ছে নদী। জলে নৃত্য করছে জ্যোৎস্না।



      আমি আর আব্দুল নদীর তীরে শুয়ে থাকা কংক্রিটের রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছি। আমাদের মাঝে আছে একটি সাইকেল। সেও আমাদের হাত ধরে হাঁটছে। আব্দুল আমাকে বলল, "আর কতদিন সাইকেল চালাবা?" "একটি বাইক কিনো।" আমি বললাম, "কিনতে তো ইচ্ছে করে কিন্তু এত টাকা কোথায় পাবো ভাই?" সে বলল, "তুমি তো বেসরকারি স্কুলে পড়াও, টিউশনি করো।"  হ্যাঁ ভাই সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল যদিও অল্প বেতন কিন্তু করোনায় একেবারে শেষ হয়ে গেছি। স্কুল বন্ধ, টিউশন বন্ধ, বিড়ি বাঁধা ধরলাম, সেটাও বন্ধ হল, একেবারে হাত খালি হয়ে গিয়েছিল ভাই; সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছিল। তারপর করোনা বিদায় নিল, ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হল, ছন্দে ফিরল সব। আবার শুরু হল করোনাপূর্বের জীবিকার পথ চলা।  এখন কোনরকমে সংসার চলে যায়। বাইক কেনার কথা মনের জানালায় উঁকি মারে কিন্তু টাকায় কুলোই না। সে বলল, "কিস্তিতে নিয়ে নাও।" নেওয়া যেতে পারে তবে পুলিশের যে বাইক ধরার চাপ ভাই তাতে কিস্তির উপর উপড়ি পাওনা হয়ে যাবে, অবশেষে ভিটেমাটি বিক্রি করতে হবে। সে বলল, "হেলমেট পরে বাইক চালাবা তবে পুলিশ ধরবে না, আরোহীর ভালোর জন্য ধরছে।" আমি বললাম, তা হয়তো কিছুটা হবে। তবে হেলমেট পরে থাকলেও ধরতে দেখেছি আর যদি তারা ইচ্ছে করে কিছু না কিছু ভুল বের করে ধরতে পারবে কারণ বাইক চালানোর বেশ কিছু নিয়ম থাকে যা হয়তো আরোহীরা পুরোপুরি মানতে পারে না। যেমন ধর, তুই স্থানীয় ছেলে, বাজার করার জন্য তাড়াহুড়ো করে হেলমেট পরে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিস কিন্তু তোর পায়ে জুতো নেই, আছে চপ্পল, বা গাড়ির কাগজপত্র নিতে ভুলে গেছিস, তোকে ধরলো আর ফাইন করলো। আরো দেখা যায় আমাদের মত গরীব ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের কিস্তিতে কেনা বাইকগুলোই ধরা পরে, ফাইনের শিকার হয়। ক্ষমতাশালীদের অবশ্য অসুবিধা হয় না। এই কথা বলতে বলতে আমাদের পাশ দিয়ে আমাদের মত একটি সুদর্শন যুবক একটি সুন্দর বাইক নিয়ে চলে গেল। আমি একদৃষ্টিতে চেয়েই থাকলাম। ধীরে ধীরে সামনের দিগন্তরেখায় মিলিয়ে গেল সে। আমার চোখ আবছা হয়ে এল। 


©® মোঃ ইজাজ আহামেদ (Md Ejaj Ahamed)
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url