কবিতা - শ্মশান, কলমে - এইচ.এম. রিয়াজুল হক
শ্মশান
এইচ.এম. রিয়াজুল হক
নিশীথে চুপচাপ হাওয়া নামে বাউড়িয়ার মাঠে,
হাটগাছার প্রান্তে শ্মশানের ধুলোজমা পথ-
যেখানে অন্ধকারে এক চিতাভস্মের গন্ধ মিশে আছে
মাটির গভীরে, শত কষ্টের স্তব্ধ ভাষ্য হয়ে।
সত্তর বছরের নীরব এক লড়াই,
যেখানে নেই রাজনীতি,
নেই ধর্মের ছায়া-
আছে কেবল মানুষের জীবন,
মানুষের মৃত্যুর নিরুপম চিহ্ন।
এই জমি শুধু একখণ্ড ধুলো নয়,
এ জমি পূর্বপুরুষের স্বপ্ন,
সন্তানের করুণা,
নৈঃশব্দ্যের বুকের মধ্যে ছেঁকে রাখা কান্না।
তবু কাগজে তার নাম ছিল না-
ছিল না আইনের শংসা,
ছিল শুধু প্রার্থনা,
দীঘল প্রতীক্ষা,
আর বিশ্বাস-কোনও একদিন
প্রশাসনের আলো পৌঁছাবে সেই চিতার পাশের মাটিতে।
তবেই তো এল এক আশার আলো,
কথায় নয়, কাজের ভাষায়-
প্রশাসক নামক সেই মানুষটি,
যিনি কলমে নয়,
হৃদয়ে লিখে ফেললেন মানুষের অধিকার।
মাননীয় মন্ত্রীর আহ্বানে, গ্রামবাসীর কণ্ঠে,
তিনি শোনালেন সেই শ্মশানের নিঃশব্দ আর্তি।
আজ রেকর্ডে উঠলো সেই জমি-
শুধু রেজিস্ট্রির খাতা নয়,
ইতিহাসের পাতায়-
আজকে এই ভূমি পেলো তার স্বীকৃতি,
নাম পেলো, অধিকার পেলো,
আর মানুষ পেলো এক অক্লান্ত আশ্বাস।
কেউ বলে হিন্দুদের শশ্মশান,
কেউ বলে শুধু জমি-
কিন্তু উত্তর বাউড়িয়ার মাঠ জানে,
এই শ্মশানে কাঁধে কাঁধ রেখেছে দুই ধর্ম,
আগুনে পোড়েছে মানুষের শরীর, ধর্মের নয়।
এখানে পাণ্ডুলিপি নয়,
পোড়ার গন্ধে লেখা ইতিহাস-
যেখানে গঙ্গা আর হাওড়া বাতাস মিশে যায় একই শ্বাসে, যেখানে মৃত্যুও বিভাজন চেনে না-
শুধু চেনে একতার তীব্র আলো।
আজ দুই গ্রাম হাসছে-
হাসছে কারণ দীর্ঘ দিনের অভাব মিটেছে,
হাসছে কারণ প্রশাসন কথা রেখেছে,
আর হাসছে কারণ এই দেশ,
এই ভূমি আজও মানুষের, মানুষেরই জন্য।
জীবনানন্দের কণ্ঠে হয়তো এ কবিতা আসতো পাতাঝরার মতো-
তবু আমাদের কলমে,
এই আধুনিক সময়েও,
তাঁর মতো করে লিখি-
যেখানে শেষ আশ্রয়ও বলে, "মানুষই সবচেয়ে বড় পরিচয়।"

