একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা (২২টি), কলমে - মোঃ ইজাজ আহামেদ (Md Ejaj Ahamed)
বৃষ্টির আদরে
মোঃ ইজাজ আহামেদ
মেঘ রোদ্দুরের লুকোচুরি,
আঙিনায় দাঁড়িয়ে আমি;
হঠাৎ করে শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি;
বৃষ্টির আদরে মনে পড়লো তোমাকে;
বৃষ্টি মেখে বৃষ্টি স্নাত হয়ে
মনে কল্পনা আঁকি;
তুমি আমি বৃষ্টিতে ভিজি;
আনন্দের জোয়ার উঠে মনের সমুদ্রে;
দিগন্ত পেরিয়ে মেঘ বালিকারা আমাদের দেখতে আসে;
আমাদের সাথে তারা হেসে উঠে মহাউল্লাসে;
মাঝে মাঝে হাত ধরে দুজনে
বৃষ্টির জলে লাফা লাফা করি,
জলের ফোঁটা ছিটিয়ে একে অপরকে উপহার দি,
মাঝে মাঝে দুজনে পাশাপাশি
দুহাত ছড়িয়ে আকাশের পানে চেয়ে থাকি।
বৃষ্টি থামলো, থামলো আমার কল্পনার স্বপ্ন;
এক পশলা বৃষ্টি আমার মনের দেশে নিয়ে এসেছিল
রোমান্টিসিজমের বৃষ্টিধারা;
মেঘের খামে তোমায় দিলাম পাঠিয়ে
আমার এই বৃষ্টি ভেজা কল্পনার বর্ণনা।
শরতের আগমনে
মোঃ ইজাজ আহামেদ
শরতের আগমনে নীল আকাশ, শুভ্র মেঘ আনন্দে সেজেছে,
সেজেছে নদীর তীর কাশফুলে;
হাসছে কাশফুল হাওয়ায় দুলে,
নৃত্য করে চলেছে সারা দিন ধরে;
নেই ক্লান্তির চিহ্ন তার দেহে;
মাঝি নৌকা নিয়ে ভাসে স্রোতে
ভাটিয়ালি গান গেয়ে।
আমি নিয়ে যাবো তোমাকে
নদীর তীরের শুভ্র কাশবনে
নৌকায় চেপে ভাটিয়ালি গান শুনতে শুনতে
আর সাদা মেঘ আকাশের নীল পথ বেয়ে
যাবে আমাদের সাথে;
তোমার শুভ্র দেহের পরনে থাকবে নীল শাড়ি,
নীল চুরি, নীল টিপ, রুপোর দুল, রুপোর শিঞ্জিনি
যেন শরতের আকাশ
আর তার মাঝে তুমি এক টুকরো সাদা মেঘ;
সেখানে পৌঁছে তোমার বিন্যস্ত চুলে গুঁজে দেব কাশ;
আমরা খেলবো লুকোচুরি কাশবনে,
বলবো হৃদয়ের কথাগুলো একে অপরকে;
তুমি হেসে উঠবে তাদের সাথে,
তোমার সেই ভুবনভোলান হাসিতে
হারিয়ে যাবো রূপকথারই দেশে।
আমি নিয়ে যাবো তোমায়
মোঃ ইজাজ আহামেদ
শরতে আকাশের নীল সাগরে
ভেসে বেড়ায় শুভ্র মেঘের ভেলা,
নদীর তীরে শুভ্র কাশের মেলা,
হাওয়ায় দোলে কাশফুল রেল লাইনের ধারে,
উঁকি মারে পথেরও ধারে;
মাঝি নৌকায় ভেসে ভাটিয়ালি গান গায়;
ট্রেনে, গাড়িতে অনেকে জানালার ধারে বসে
মুগ্ধ হয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে
নীল-সাদার নীচে কাশের মেলায়।
আমি ঘোরাবো তোমায় নদীর তীরে কাশের মেলায়;
স্রোতে খেয়ায় ভেসে নিয়ে যাবো তোমায়
মাঝির ভাটিয়ালি গান শুনে শুনে কাশের ইশারায়।
আমি নিয়ে যাবো তোমায় কাশের মেলায়
রেল লাইনের কাছে হাতে হাত রেখে,
সেথায় থাকবো পাশাপাশি দুজনায়;
ট্রেন কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ছুটতে থাকবে,
অপু-দুর্গার মতো কাশফুলের বনে দাঁড়িয়ে
আমরা থাকবো তাকিয়ে।
একদিন ট্রেনে করে নিয়ে যাবো তোমায়,
জানালার পাশে বসে উঁকি মেরে থাকবো দুজনায়;
কল্পনায় সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে
শরতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে
পাড়ি দেব আকাশের নীল-নীলিমায়।
আকাশের নীলে
মোঃ ইজাজ আহামেদ
আকাশের নীল সাগরে মেঘের খেয়াতে দাঁড়িয়ে
তোমাকে ডাকি কল্পনাতে বারে বারে;
তুমি এই সাদা মেঘের শাড়ি-চুড়ি পরে
আসবে আমার কাছে
মেঘের খেয়ায় ভেসে যেতে;
তোমার এলোমেলো চুলে শ্বেত জুঁই সাজানো থাকবে,
তুমিই যেন শুভ্র মেঘেদের রানী,
আমি তোমাকে নিয়ে দিক-দিগন্তে দেব পাড়ি
সীমান্ত পেরিয়ে কত অজানা দেশে-
কত প্রান্তর, কত তেপান্তর,
কত পাহাড়-পর্বত, কত সাগর
কত নদী ডিঙিয়ে;
আমার মনের আকাশ জুড়ে
থাকবে শুধু তুমি শুভ্র মেঘ হয়ে
অজস্র দেশ ভ্রমন করে আসবো ফিরে
কোনো এক পূর্ণিমা সন্ধ্যার পরে
পূর্ণিমা চাঁদের জোছনা মেখে;
জোৎস্নায় প্লাবিত আকাশ, বাতাস, মাটি,
আদিগন্তে পূর্নিমার হাসি;
তারারা মারবে উঁকি;
আমরা হৃদয়ের ক্যানভাসে আনন্দের তুলি দিয়ে আঁকবো ছবি;
সেই ছবি বিনিময় করবো আমি আর তুমি।
ধ্রুবতারা
মোঃ ইজাজ আহামেদ
আকাশে ধ্রুবতারা,
আমার মনের ঘরে উঁকি দিচ্ছে তোমার স্মৃতিরা,
আকাশের এই ধ্রুবতারা দেখে
হাতে হাত রেখে পাড়ি দিয়েছিলাম নদী পেরিয়ে
এক প্রান্তরে,
দিগন্তরেখায় ঝুলছিল একফালি শশী,
হৃদয়ের আকাশে আনন্দের ধ্রুব তারা মারছিল উঁকি,
আমাদের বাগযন্ত্র আনন্দে আত্মহারা হয়ে
পারছিল না কিছু বলতে,
শুধু শোনা যাচ্ছিল
হৃদের সিস্টোল ও ডায়াস্টোলের শব্দ
নিস্তব্ধ গহীন রাতে চলমান ঘড়ির কাঁটার মতো,
সেই জোছনা প্লাবিত সবুজ প্রান্তরে নিস্তব্ধতার মাঝে
সেই আওয়াজই কানে কানে বলে দিচ্ছিল মনের না বলা কথা
স্টেথোক্সেপ ছাড়া;
তোমার নিশ্চুপ মায়াবী রূপের কাছে
তোমার মায়াবী চাহনির কাছে
ঐ চাঁদও ম্লান হয়ে যাচ্ছিল।
বসন্তের এক অপরাহ্নে
মোঃ ইজাজ আহামেদ
বসন্তের এক অপরাহ্নে
বাড়ির ছাদে বসে
লিখছিলাম এক কবিতা;
হটাৎ কানে ভেসে এলো কোকিলের কুহু কুহু ডাক;
কোকিলের ডাক শুনে মনে পড়লো তোমার কথা;
তুমি শুনিয়েছিলে আমাকে মিষ্টি গান;
কী সুন্দরই না ছিল তোমার গলা!
মনে হয় তোমার চেয়ে বসন্তের কোনো কোকিলও
এত সুন্দর সুরালো গান গায়নি কখনও।
বাতাসে ভেসে আসছিল ফুলের সুগন্ধ;
কিন্তু তোমার শরীরের সুগন্ধ বসন্তের চেয়েও মধুর ছিল।
এই যে বসন্তে গাছে গাছে পুষ্প,
নির্মল আকাশে আনন্দে পাখিরা ডানা মেলে করে নৃত্য;
প্রকৃতি যেন উৎসবে মেতে উঠে নতুন সাজে;
কিন্ত তুমি যখন সাজতে
সবুজ, লাল, গোলাপি শাড়িতে,
কপালে নীল টিপ পরে,
দিতে চুলে পুষ্প,
মনে হয় বসন্তের সৌন্দর্যও তোমার কাছে ম্লান হয়ে যেত।
শীতের হলুদ শহরে তুমি আর আমি
মোঃ ইজাজ আহামেদ
শীতের হিমেল হাওয়া গুন গুন করে
গান করতে করতে হেঁটে যাচ্ছে;
সকলে গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছে,
সোনা ঝরা রোদ্দুর উষ্ণ আদর করে যাচ্ছে;
পুলকিত হচ্ছে সকলে;
সরষে ফুলেরা বসন্ত উৎসবে
সজ্জিত রমণীদের মতো হলুদ পোশাক পরে নৃত্য করছে,
যেন কোনো উৎসব;
পুলকিত হচ্ছিল আমার মন;
খুব মিস করছিলাম প্রিয়তমা, তোমাকে;
তুমি যদি এখন থাকতে আমার সাথে
কতই না আনন্দের প্রবাহধারা বয়ে যেত মনের সমভূমিতে?
হারিয়ে যেতাম এই সরষে ফুলের নগরীতে;
হাতে হাত রেখে হেঁটে যেতাম ফুলের স্পর্শ ও গন্ধ মেখে;
তোমার বিন্যস্ত রেশমী কেশে
গুঁজে দিতাম শীতের হাসি সরষে পুষ্পকে
আর তোমার পরনে থাকতো হলুদ রঙের ব্লাউজ-শাড়ি;
কানে কাঁচা সোনার ঝুমকা দুল, গলায় হার, হাতে চুড়ি;
প্রজাপতিরা আসতো আমাদের স্বাগত জানাতে
আর ফটো তুলতাম দুইজনে স্মার্টফোনে;
তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোডে যেতাম মেতে
আর আপলোড করা মাত্রই লাইক- কমেন্টের বন্যায় যেতাম ভেসে।
তোমার স্মৃতি
মোঃ ইজাজ আহামেদ
জানো প্রিয়তমা,
মনের পাণ্ডুলিপিতে তোমার নামে
কত কবিতা লিখেছি;
তোমার স্মৃতির অ্যালবম কত যতনে
আগলে রেখেছি;
সেই পাণ্ডুলিপির পাতা,
সেই অ্যালবমের পাতা
আদর মাখা হাতে উল্টে উল্টে দেখি
আর মনের আকাশে রোমান্টিসিজম দেয় উঁকি;
মনের অলিগলিতে হেমন্তের হলুদ পাতার ঝরে পড়ার মতো
রয়েছে তোমার সঙ্গে কাটানো সোনালী দিনগুলো
যেন হলুদ গালিচা
ভ্রমণপ্রেমীদের মতো, ক্যামেরাবন্দি প্রেমীদের মতো
আমাকে দেয় হাতছানি তা।
নস্টালজিক হয়ে পড়ি
মোঃ ইজাজ আহামেদ
আমি বসে আছি নদীর তীরে
স্রোতস্বিনীর প্রবাহধারা হেঁটে যাচ্ছে হেসে হেসে
আকাশ পরেছে নীল শাড়ি শুভ্র মেঘের ওড়না
পরেছে শুভ্র মেঘের গহনা
আর সে জলের আরশিতে দেখছে নিজেকে
কেমন লাগছে এই সাজে
তটের রুপালি কাশফুল তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে
অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে
আর হাতটা নাড়িয়ে টা টা দিচ্ছে
আহা কী অপরূপ দৃশ্য
কী আনন্দই না নিয়ে এসেছে
আমার মন খারাপের ঘরে
মনে পড়লো আমার প্রিয়তমার কথা
সেও এই আকাশের মতো নীল চুড়িদার আর সাদা ওড়না
পরে খেয়ানৌকায় বসেছিল আর আমি মাঝি হয়ে
ভাটিয়ালি গান শোনাতে শোনাতে
পাড়ের কাশফুলের মেলায় গিয়েছিলাম নিয়ে
কতই না আনন্দধারা বইছিল মনের সমভূমিতে
বিন্যস্ত চুলে শুভ্র কাশফুল বুনে হাতে কাশফুল নিয়ে
কতই না ফটো তুলেছিল ও স্মার্টফোনে
আর সেলফিও তুলেছিলাম দুইজনে
আজও সেই স্মৃতির ধ্রুবতারা মনের আকাশে উদিত হলে
পড়ি নস্টালজিক হয়ে
হৃদয়ের কথা
মোঃ ইজাজ আহামেদ
চৈত্রের তারকাখচিত গগনে
আধফালি শশী দেখে
আমার স্মৃতির খাতায় লেখা
তোমার মধু মাখানো কথা
আমার মনে পড়ে।
চন্দ্র ও সহস্র নক্ষত্রখচিত আকাশের নিচে
তোমার বলা মিষ্টি কথাগুলো
মনে হতো কবিতা যেন;
শুনতো আকাশটা,
শুনতো বাতাসটা;
নির্মল সমীরণের ছোঁয়াতে,
নাতিশীতোষ্ণ মনোরম আবহাওয়াতে
জ্যোৎস্না স্নাত হয়ে
আমিও শুনেছিলাম অনাবিল আনন্দে।
শুধু নয় তোমার বলা কথাগুলো
আমি শুনেছিলাম তোমার হৃদয়ে লুকানো অব্যক্ত কথাগুলো
তোমার চোখের চাহনিতে,
তোমার মুখমন্ডলে উদ্ভাসিত ভাষা দেখে।
ঐ দেখ আকাশে রামধনু
মোঃ ইজাজ আহামেদ
ঐ দেখ, আকাশে রামধনু উঠেছে,
আমি তোমার জন্য ঐ রামধনুর রঙ দিয়ে
একটি ঘর সাজাবো।
ঐ দেখ, আকাশের পথে মেঘবালিকারা হেসে বেড়াচ্ছে;
আমি তোমাকে নিয়ে মিশে যাবো তাদের দলে,
হেসে হেসে পাড়ি দেব তাদের সাথে
কোনো সবুজের দ্বীপে
যেথায় থাকবে সবুজের সমাহার আদিগন্তে,
আকাশের নীল সাগরে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে যাবে,
যেথায় আমি হবো রাজা আর তুমি হবে রানি
আর মেঘবালিকারা হবে তোমার সাথী;
মেঘের ভেলায় চড়ে আমরা পাড়ি দেব দিক- দিগন্তে
আর সুখের ভেলায় চড়ে আসবো ফিরে স্বপ্নের আবেশে।
তুমি পাশে আছো বলে
মোঃ ইজাজ আহামেদ
তুমি পাশে আছো বলে
আমার মনের বীণায় তান বাজে।
তুমি পাশে আছো বলে
আমার মনের মহাসাগরে আনন্দের ঢেউ উঠে।
তুমি পাশে আছো বলে
আমার মন হৃদয়ের আঙিনায় আদুরে আল্পনা আঁকে।
তুমি আছো বলে
আমার হৃদয়ের আকাশে একফালি পূর্ণিমা চাঁদ উঠে;
আমার মনের পৃথিবীকে জোছনাতে ভরিয়ে তুলে;
সেই জোছনাতে আমার মনের পৃথিবী আনন্দের প্লাবনে
প্লাবিত হয়ে উঠে।
তুমি চলে গেছ বলে
মোঃ ইজাজ আহামেদ
তুমি চলে গেছ বলে
বসন্ত এলেও বসন্ত মনে হয় না।
তুমি নেই বলে
বসন্ত আমার মনে জাগে না।
তুমি চলে গেছ বলে
কোকিলের কুহু কুহুতানে মনে শিহরণ জাগে না।
তুমি নেই বলে
ফুলে ফুলে মধু আহরণে ব্যস্ত থাকা
ভ্রমরার গুঞ্জনে আমার হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার আসে না।
তুমি ফিরে আসোনি বলে
শিমুল,পলাশ,কৃষ্ণচূড়া, আম্র,সরষে,
গোলাপ আমার মনকে আকর্ষণ করেনা।
তুমি আমার কাছে নেই বলে
ফাগুনের হাওয়া, ফাগুনের জোছনা,
মনোরম আবহাওয়া আমার হৃদয়ের আকাশে ভাসে না।
তুমি ফিরে আসোনি বলে
দিগন্ত রেখা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে না।
তুমি চলে গেছ বলে
আমার মনের মহাকাশে বসন্ত আসে না।
প্রান্তরে
মোঃ ইজাজ আহামেদ
বসন্তের কোন এক পূর্ণিমা সন্ধ্যাতে
তুমি ও আমি যাবো এক প্রান্তরে;
থাকবো বসে শুধু দুজনে
পূর্ণিমা চাঁদের জোছনা মেখে;
জ্যোৎস্না স্নাত হয়ে
দু চোখ ভোরে দেখবো দুজন দুজনকে;
নির্মল বাতাস ছুঁয়ে যাবে আমাদেরকে;
কাটবে সময় অনাবিল আনন্দে;
অনাবিল আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাবে হিয়া;
আমাদের এই শুভক্ষণের সাক্ষী থাকবে চন্দ্র তারা;
সাক্ষী থাকবে সহস্র তারকাখচিত নির্মল আকাশ;
সাক্ষী থাকবে জ্যোৎস্না স্নাত মৃদুমন্দ বাতাস;
তারাও হয়তো আমাদের দেখে করবে ঈর্ষা।
তোমাকে নিয়ে
মোঃ ইজাজ আহামেদ
ইচ্ছেগুলো স্বপ্নকে ছুঁতে চায়,
তোমার আর আমার স্বপ্নগুলোকে এক করতে চায়।
আমি স্বপ্ন দেখি একদিন আকাশের ধ্রুবতারা দেখে
প্রান্তর পেরিয়ে
তোমাকে নিয়ে যাব এক তেপান্তরে;
খোলা আকাশের নিচে বসব দুজনে;
মিটি মিটি তারারা উঁকি মারবে আমাদের দিকে;
মৃদুমন্দ বাতাস আদরের ছোঁয়া দিয়ে যাবে;
হৃদয়ের অব্যক্ত কথাগুলো প্রাণখুলে বলবো দুজনে;
হৃদয়ের দরজা খুলে দেব তোমার জন্যে;
আমার মনের আয়নায় দেখবে নিজেকে,
আমি দেখবো নিজেকে তোমার মনের আয়নাতে;
আমাদের চোখের তারায় ভেসে উঠবে
তোমার আমার স্বপ্নগুলো;
মনের আঙিনায় রোপন করবো
ইচ্ছের গাছগুলো ;
চোখে চোখ রেখে
থাকবো দুজনে,
কাটাবো সময় প্রফুল্ল চিত্তে।
স্বপ্নের তরীতে চেপে
পাড়ি দেবো দুজনে স্বপ্নের দেশে।
ইচ্ছেগুলোর অনুরণন হবে
মনের আকাশে বাতাসে বারে বারে।
তুমি আসবে ফিরে
মোঃ ইজাজ আহামেদ
আমি স্বপ্ন দেখি
তুমি আসবে ফিরে
আবার আমার কাছে;
তুমি আসবে শ্রাবণের বৃষ্টিধারা হয়ে।
তুমি আসবে শরতের নীলাভ আকাশে শুভ্র মেঘ হয়ে,
ভোরে হালকা শিশির ভেজা দুর্বার উপর চাদরের মতো বিছিয়ে থাকা
শিউলি ফুল হয়ে,
শিউলি ফুলের সুগন্ধ মাখা
মৃদুমন্দ বাতাস হয়ে,
সূর্যের সোনালী আভার মতো নির্মল আলো হয়ে, নদীর তীরের হাওয়ায় আনন্দে নৃত্য করা কাশফুল হয়ে।
আমি স্বপ্ন দেখি তুমি আসবে ফিরে
শীতের সকালে দুর্বাঘাসের ওপর পড়ে থাকা মুক্তোর মতো শিশির বিন্দু হয়ে,
শীতের রুপালি কুয়াশা হয়ে,
শীতের গোলাপ ও সরষে ফুল হয়ে।
তুমি আসবে ফিরে বসন্তের কোকিলের কুহু কুহু ডাক হয়ে,
বসন্তের রংবেরঙের ফুল হয়ে,
বসন্তের মুকুলের ঘ্রাণেভরা বাতাস হয়ে,
তুমি আসবে ফিরে পূর্ণিমা রাতের জোছনা হয়ে।
তুমি আমার হবে
মোঃ ইজাজ আহামেদ
তুমি আমার মহাকাশ হবে?
যে মহাকাশে আমি ছায়াপথ হয়ে ঘুরে বেড়াবো।
তুমি আমার ছায়াপথ হবে?
যে ছায়াপথে আমি কোন তারা হয়ে ঘুরে বেড়াবো
তুমি আমার আকাশ গঙ্গা হবে?
যেখানে আমি কোন নক্ষত্র হয়ে ঘুরে বেড়াবো।
তুমি আমার সৌর জগৎ হবে?
যেখানে তুমি হবে সূর্য
আর আমি হবো গ্রহ,
আর আমি তোমার চারিদিকে ঘুরে বেড়াবো;
আমি আর তুমি পরস্পরের আকর্ষণে থাকবো।
তুমি আমার পৃথিবী হবে ?
আমি তোমার চাঁদ হয়ে থাকবো।
তুমি আমার আকাশ হবে?
আমি মেঘ হয়ে তোমার মাঝে ভেসে বেড়াবো;
আমি পাখি হয়ে তোমার মাঝে ডানা মেলে
আনন্দে উড়ে বেড়াবো;
তোমার মাঝে থেকে মেঘ থেকে
বৃষ্টি হয়ে মাটিকে সিক্ত করবো।
তুমি আমার ফুল হবে?
আমি প্রজাপতি হয়ে তোমার কাছে উড়ে বেড়াবো।
তুমি ফুলের গাছ হবে?
আমি তোমার মালি হয়ে তোমার পরিচর্যা করবো।
তুমি আমার বসন্তের বাতাস হবে?
আমি ফুলের সুগন্ধ হয়ে তোমার সঙ্গে ভেসে বেড়াবো
আর সকলের মনকে জুড়িয়ে দেব এক অনাবিল আনন্দে।
তুমি আমার ফাগুনের পূর্ণিমা রাত হবে?
আমি তোমার জোছনা হয়ে
চারিদিকে আলো ছড়াবো;
আর আমাদের দেখে
আমাদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে
কবিরা তাদের শব্দমাধুরী দিয়ে
সুন্দর সুন্দর কবিতা বুনবে।
শরতের আগমনে
মোঃ ইজাজ আহামেদ
শরতের আগমনে নীল আকাশ, শুভ্র মেঘ আনন্দে সেজেছে,
সেজেছে নদীর তীর কাশফুলে;
হাসছে কাশফুল হাওয়ায় দুলে,
নৃত্য করে চলেছে সারা দিন ধরে;
নেই ক্লান্তির চিহ্ন তার দেহে;
মাঝি নৌকা নিয়ে ভাসে স্রোতে
ভাটিয়ালি গান গেয়ে।
আমি নিয়ে যাবো তোমাকে
নদীর তীরের শুভ্র কাশবনে
নৌকায় চেপে ভাটিয়ালি গান শুনতে শুনতে
আর সাদা মেঘ আকাশের নীল পথ বেয়ে
যাবে আমাদের সাথে;
তোমার শুভ্র দেহের পরনে থাকবে নীল শাড়ি,
নীল চুরি, নীল টিপ, রুপোর দুল, রুপোর শিঞ্জিনি
যেন শরতের আকাশ
আর তার মাঝে তুমি এক টুকরো সাদা মেঘ;
সেখানে পৌঁছে তোমার বিন্যস্ত চুলে গুঁজে দেব কাশ;
আমরা খেলবো লুকোচুরি কাশবনে,
বলবো হৃদয়ের কথাগুলো একে অপরকে;
তুমি হেসে উঠবে তাদের সাথে,
তোমার সেই ভুবনভোলান হাসিতে
হারিয়ে যাবো রূপকথারই দেশে।
হলদে চাঁদ
মোঃ ইজাজ আহামেদ
হলদে পূর্ণিমা চাঁদ আকাশে,
মেঘেরা দূর দূরান্ত থেকে ভিড় জমিয়েছে
তারই চার পাশে
জ্যোৎস্না স্নান করবে বলে
ঠিক যেমন নদীতে লোকেরা স্নান করতে আসে;
আমার গুরু মস্তিষ্ক দিলো জাগিয়ে
তোমার- আমার সেই স্মৃতিকে;
তুমি আর আমি গোলাকার চন্দ্রের নিচে বসে
কাটিয়েছিলাম সময় এক জোছনা প্লাবিত প্রান্তরে;
কত কথাই না বলেছিলাম দুজনে,
নির্মল বাতাসের ঢেউয়ে
জ্যোৎস্না স্নাত হয়ে
কেটেছিল সময় অনাবিল আনন্দে
আর সাদা মেঘেরা জমায়েত করেছিল আদিগন্তে;
কিন্তু তুমি আমার আজ নেই পাশে;
এই দৃশ্য দেখে
আমার হলদে হৃদয়ের হৃদস্পন্দন গেছে বেড়ে,
সুষুম্নাশীর্ষক পারছেনা নিয়ন্ত্রণ করতে;
হাইপোথ্যালামাস আমার হিয়ার নীল আকাশ থেকে
খসে পড়া দুঃখের নীল তারাগুলোকে পারছেনা নিয়ন্ত্রণ করতে;
আমার মস্তিষ্কে ডোপামিন ক্ষরিত হচ্ছে;
মনে হয় যেন রক্তের হিমোগ্লোবিনও হিমোসায়ানিনে
পরিণত হয়েছে।
নীল পাখি
মোঃ ইজাজ আহামেদ
জানো প্রিয়,
আমার হৃদয়ের দরজা সর্বদাই খোলা রেখেছি তোমার জন্য;
আমি চাইনা তুমি এসে দরজায় করাঘাত করো
আর দরজা খোলার অপেক্ষায় বাইরে দাঁড়িয়ে থাকো;
আমি চাই তুমি সরাসরি নির্দ্বিধায় হৃদয়ের ঘরে প্রবেশ করো;
আমি উজাড় করে দেব আমার হৃদয়ের নীল আকাশটা তোমার কাছে।
তুমি নীল পাখি হয়ে উড়ে গেছ বহুদূরের অচিন দেশে;
আমি তোমার অপেক্ষায় দিন গুণী মনে মনে;
কেটে গেছে কত দিন, কত রাত, কত ঋতু;
তুমি আসোনি তবু;
বিষণ্ন লাগে তবু
আশায় দিন গুনি;
ওই যে নীল আকাশে শুভ্র তুলোর মত মেঘ ভাসে;
জানো, সেই শুভ্র তুলোর মেঘের ভেলায় আমি পাড়ি দিয়েছি
কত অজানা দেশে তোমার খোঁজে
তবু পাইনি দেখা, ফিরে এসেছি শুন্য হয়ে বিষণ্ন মনে বারে বারে;
দেখতে না পাওয়ার আকুলতায় আমার হৃদয়ের দুঃখের আগ্নেগিরি থেকে
নির্গত হয় বিষণ্নতার লাভা তোমার বিরহে।
আগুন
মোঃ ইজাজ আহামেদ
তোমার বিরহে
আমার বুকের ভেতর দাউ দাউ করে জ্বলছে
বেদনার আগুন
দুঃখের লেলিহান শিখায় জ্বলছে মন
বিচ্ছেদের ব্যাথা বেদনায় পুড়ছে হৃদয়
শুধু তোমার বিরহের আগুনেই নয়
ব্যর্থতার আগুনে পুড়ে হয়েছি ছারখার
ভুলতে পারি না ব্যার্থতার গ্লানি
ভুলতে পারি না তোমার দেওয়া দুঃখের শ্রান্তি
তোমার স্মৃতিরা আমার মনের মাঝে বারে বারে দেয় উঁকি
হৃদয়ে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে ব্যর্থতা ও দুঃখের আগুন
জানিনা কবে নিভবে এ আগুন
তবে যদি আবার মেঘ হয়ে ফিরে আসো
মনের আকাশে আর অঝোরে বৃষ্টিপাত করো
সেই আগুন শীঘ্রই নিভে যাবে
হয়তো আমি ডানা মেলেছি বৃথা স্বপ্নের আকাশে
যদি নাও আসো
সময় ধীরে ধীরে সেই আগুন নিভিয়ে দেবে
তার শীতল বৃষ্টিধারা দিয়ে
সে ব্যর্থতাগুলো দূরে সরিয়ে দেবে
আর বাঁচতে শেখাবে নতুন করে।
মুছে যাক তোমার স্মৃতি
মোঃ ইজাজ আহামেদ
মেঘ-রোদ্দুরের শ্রাবণে
একলা বসে
ভাবি তোমার সঙ্গে কাটানো স্মৃতিগুলি।
তোমার সেই স্মৃতিগুলি আমার মনের মহাকাশে দেয় উঁকি,
হৃদয়ে দেয় ব্যাথা, বিষণ্ন করে মনকে;
আমি চাই না সেই স্মৃতির বইয়ের পাতাগুলি আঁকড়ে ধরে থাকতে,
আমি চাই সেই স্মৃতির পাতাগুলি
এই শ্রাবণের মুষলধারে
বৃষ্টিধারায় ধুয়ে মুছে যাক হৃদয় থেকে
ঠিক যেমন গাছের পাতা থেকে ধুয়ে মুছে যায় ধুলো বালি।
No comments