আছহাব উদ্দিন তালুকদার-এর দুটি কবিতা (আসাম)
* উত্তম শব্দ *
আছহাব উদ্দিন তালুকদার
(বর্ণানন্দন কাব্যের স্রষ্টা)
~~~~~~~~~
এক বর্ণে শ্রেষ্ঠতম শব্দ হলো মা,
অভিধানে মা শব্দের নেই উপমা।
দু'বর্ণে মহান শব্দ আজীব বাবা।
বাবা মানে চিরসাথী হৃদয় কাবা।
তিন-বর্ণে সুপ্তজ্ঞান শ্রেষ্ঠ বিবেক,
তত্ত্বজ্ঞানে মত্ত যেই সাধু সাবেক।
চার-বর্ণে মহোত্তম শব্দ মানবতা,
জীবেপ্রেম অবিহনে জীবন বৃথা।
পঞ্চ-বর্ণে শ্রেষ্ঠ শব্দ পরোপকার,
পরহিতে সর্বসুখ জীবন সাকার।
বর্ণ ছয়ে শব্দ সেরা সহনশীলতা,
ধৈর্যধারণ মানেই চির-সার্থকতা।
সপ্তম বর্ণে বোধ অনধিকারচর্চা,
অনর্থক কভু নহে বিবেক খরচা।
অষ্ট-বর্ণে শ্রেয়ঃ প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব,
দূরদর্শি মানুষের স্বীকৃতি কৃতিত্ব।
ন-বর্ণে সেরা কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা,
প্রতিবন্ধকতায় আবদ্ধ সফলতা।
দশ বর্ণ আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন,
কাণ্ডজ্ঞানহীন নির্বোধরাই বিপন্ন।
* ব্যবহারে পরিচয় *
আছহাব উদ্দিন তালুকদার
(দৃষ্টিনন্দন কাব্যের জনক)
~~~~~~
ব্যবহারে বংশের পরিচয় ব্যবহারে নন্দিত,
ব্যবহারে মান কুলমান ব্যবহারেই নিন্দিত।
ব্যবহারে মহামতি ব্যবহারে দুষ্টমতি লোক,
ব্যবহারে মনুষ্যত্ব ব্যবহারে কৃত্ত মন্দলোক।
ব্যবহারে বিসংবাদ ব্যবহারে উঁচুনীচু ভেদ,
ব্যবহারে সংঘাত ব্যবহারে সম্বন্ধে বিচ্ছেদ।
ব্যবহারে মিতালি আর ব্যবহারে গলাগলি,
ব্যবহারে অতিষ্ঠ শিষ্ট ব্যবহারে গালাগালি।
ব্যবহারে প্রেমপ্রীতি ব্যবহারে বিশ্ব-সংহতি,
ব্যবহারে শ্লাঘা, ব্যবহারে বিদ্বেষ বিসংগতি।
ব্যবহারে কুজন চেনা ব্যবহার গুণে সুজন,
ব্যবহারে বিড়ম্বনা আবার ব্যবহারে পূজন।
ব্যবহারে পরিতুষ্ট ব্যবহারে পরিভ্রষ্ট লাচার,
ব্যবহারে ভণ্ডুল ব্যবহারে নীচকুল দুরাচার।
ব্যবহারে গর্হিত সমাজ ব্যবহারে আনুগত্য,
ব্যবহারে ব্রাত্য মানুষ ব্যবহারে মানুষ সত্য।
ব্যবহারে কুলগৌরব ব্যবহারে কুলবিনাশী,
ব্যবহারে স্বভাব বিচার ব্যবহারে সব্যসাচী।
ব্যবহারে শালীনতা কথাবার্তায় শ্লীল মৌন,
ব্যবহারে মানুষ চেনো রূপের ঝলক গৌণ।
নোট:
"বর্ণানন্দন কাব্য" মানে কবিতার প্রথম শব্দ যে বর্ণ দিয়ে আরম্ভ হবে আস্ত কবিতাটি একই বর্ণের শব্দ দিয়ে শেষ করতে হবে। অন্য বর্ণের শব্দ কবিতার ভিতরে যুক্ত করা যাবেনা। অথচ কবিতাটি তথ্য সমৃদ্ধ অর্থবহ হতে হবে। উদাহরণ ( ১) 'অ' বর্ণে যেমন:-
অনন্ত অসীম অর্হ অদ্বয়
অংশুমান আকায় অভয়।
অখিলের অধিপতি অজ
অদৃশ্যে অতিবল অগ্রজ।
2) 'আ' বর্ণে যেমন:-
আল্লাহ আসীন আরশে
আদৃত আসমানে আদ্য।
আত্মবশ আত্মভু আত্মা
আত্মনীন আবৃত আঢ্য।
৩) 'প' বর্ণে যেমন:-
'প' বর্ণে পৃথিবী 'প' পবন 'প' পরলোক,
'প' পরমপিতা 'প' পঞ্জিকা 'প' পরাঙ্মুখ।
এই হলো বর্ণানন্দ কাব্য লেখার নিয়ম।
#দৃষ্টিনন্দন কাব্যের নিয়ম# :- অক্ষরবৃত্তে লিখতে হবে কবিতা, পাশাপাশি কবিতার প্রতিটি চরণ যেন চুলবরাবর থাকে এদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। একসারি থেকে অপর সারির দৈর্ঘ্য যেন চুলবরার হয়, কবিতাটি দেখলে যেন মনে হয় রাডার স্কেলে মাফা। অক্ষরবৃত্তে লিখলেও সারির দৈর্ঘ্য সমান রাখা বড়ই কঠিন এবং সাধনার বিষয়। দৃষ্টিনন্দন কাব্য লিখতে প্রথমে সমার্থক শব্দ বেশি করে আয়ত্তে রাখা প্রয়োজন। নশ্চেৎ কবিতার প্রতিটি চরণের দৈর্ঘ্য চুলবরাবর সমান রাখা দুরূহ।
নমুনা যেমন:-( ১)
সাদা এবং কালোর সংমিশ্রণে বিশ্ব জ্ঞানকোষ,
ভালো এবং মন্দের যুগলবন্দিতে চলছে মানুষ।
যার গুণ যতো বেশি সেই সমাজে সমালোচিত,
গুণীর গুণকে নির্গুণীরা করতে চাহে কলুষিত।
(২) * দুখু মিয়া *
~~~~~
নামটি আমার দুলু মিয়া,
ডাকছে সবাই দুখু মিয়া।
ঘর-বাড়ির নেই ঠিকানা,
পথ-ঘাটে পাতি আস্তানা।
পরের বাসায় কাজ করি,
ফুটপাতে মোর ঘর-বাড়ি।
পিতামাতার নামটা বলো,
জন্ম-দিয়েই উধাও হলো।
দেখিনি যাদের স্বরূপ-টা,
কেমনে বলি ভাই নাম-টা?
No comments