Header Ads

অনুগল্প - অমানবিকতা, লেখক - এস এম মঈনুল হক

 


অমানবিকতা

এস এম মঈনুল হক


 আমি বলি কি মাকে লইয়্যা আইসো। অর খুব কস্ট হইসে।

   - আমি কি কইমু কও। দুই ব্যাটার লাইগ্যা সব ল্যাইখা দিসে। আমারে তো একটা ট্যাহাও দ্যাই নি। চার বিঘে জমি দুই ব্যাটার লাইগা ভাগ কইরা দিসে।

    - হগ্য সময় হিসাব লিকাস চলেনা। মারে লইয়া আইসো।

     - তুমি কি গো। মা তোমারে কতো কষ্ট দিসে -

    - কইসি মারে লইয়া আইসো।

              শেষ পর্যন্ত সিরাজ দুই ভাইয়ের কাছ থেকে মাকে তার বাড়িতে নিয়ে এলো। বউয়ের আনন্দ ধরেনা। বাথরুমের ধারে মাকে নিয়ে গিয়ে সাবান মাখিয়ে যত্ন করে স্নান করালো। কত দিন যে শরীরে জল পড়েনি শিরীন সেটা অনুভব করলো। অঘ্রানের প্রথম দিক। হালকা শীতের আঁচ। বারান্দায় রোদ আসছে। খাটিয়ার উপর শাশুড়িকে বসিয়ে দিয়ে রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে এলো। খাওয়া শেষ হলে তাকে শুইয়ে দিয়ে নিজের কাজে চলে গেল। এই ভাবে দু বছর সেবা যত্ন চললো। এর মধ্যে দু ভাইয়ের কেউ মায়ের একটা খবর পর্যন্ত নেয়নি। হঠাৎ সিরাজের বাড়িতে কালো রাত্রি নামলো। মা মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। বারবার বলছে- মেরাজ আজাদরে একবার দ্যাখার মুন কইরসে । ওদের আইতে বল ব্যাটা সিরাজ।

  - ঠিক আসে মা।

      সিরাজকে দেখে দুই ভাইয়ের কান্না ধরেনা।

মেরাজ বললো- দাদা, মাগীদের ল্যাইগা কি আর কইমূ হামাদের দু ভাইয়ের সম্পত্তি দুই বহিনে ল্যাইখা লইয়্যা চম্পট দিসে । ছ্যালাপিলা লইয়া দুমুঠো খাইতে পাইসি না। দুই বহিনের লাইগ্যা তোরে কতো কষ্ট দিসি। মার সমান ভাবিরে কত কষ্ট দিসি । মার সম্পত্তি দুই ভাই মিল্যা ল্যায়খা লিসী। আহুন দুইটা খাইতে পাইসি না। ভাবিরে লইয়্যা আইয়া বিহা করসিলিস। সেই জন্যি মাকে প্যাটে ভয়ইরা লইয়া তোর এবং ভাবির উপর কত কষ্ট দিসি। অথচ দুই বহীনে হামাদের ফ্যাইলা বাপের বাড়ী চইল্যা গ্যালো।

    আজাদ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সিরাজের পা দুটো ধরে কান্না করতে করতে বলল- মার কাছে লইয়া চল দাদা, না হলে আল্লা যে হামাদের খ্যামা কইরবেনা।

       তিন ভাই মায়ের পাশে বসা মাত্রই তিনি বিছানায় উঠে বসার চেষ্টা করলেন, কিন্তু পারলেন না। শুধু বললেন- তোদের কাওরেই চিনতে পারুম নাই। জীবনের স্যাস দিনটা যে হামারে সব থ্যাইকা আপুন ক্যইরলো তার লাইগা কিছুই দিবার জুটলোনা।

      শিরিনকে কাছে ডেকে শাশুড়ি বলল- মারে, হামি যে অন্যায় কইরেসি এর জন্য এই বুড়ো মাটারে খ্যামা কইরা দে। না হইলে যে ওখানেও গিয়া হামি শান্তি পাইমু না।

      - মা, আপনি অমুণ কথা কইবেন না। শ্যাষ কয়টা দিন আপনারে পাইসি। হামার মনে যে কোনও দুঃখ ন্যায় মা। শুধু হামাদের লইগা একটু আশীর্বাদ করেন যেন পুরা পরিবার লইয়া একটু সুখে শান্তিতে থাকতে পারি 

       - মারে, তোরে কতো কষ্ট দিসি। তবুও-। তুই যে হামার মা শিরীন, সত্যিই হামার মা।

     কিছুক্ষণ পর মা বিছানায় কাতরাতে আরম্ভ করলো। উপস্থিত সবাই মায়ের শেষ সেবা করতে লাগলো। কিন্তূ কোনো কাজ হল না।

       অল্প কিছুক্ষণ পরেই এই অমানবিক মায়ের জীবনের শেষ সূর্যটা অস্তমিত হল।


       


                          

                        

                         

                    

                 

                              

No comments

Powered by Blogger.