কবিতা- কবির প্রেমে পড়লেই আসে বর্ষাকাল, কবি - মুহা আকমাল হোসেন
কবির প্রেমে পড়লেই আসে বর্ষাকাল
মুহা আকমাল হোসেন
একজন কবির প্রেমে পড়েই তোমার কাছে এসেছিল বর্ষাকাল।
তখন রিকশায় ভিজে ভিজে আমরা শহর ঘুরেছি।
একান্ত ব্যক্তিগত সময় রেখে আসি ,
জামরুল তলা কিংবা পুকুরের পাড়ে
যেখানে ছিলো লোহার বেঞ্চ।
খরা সংক্রান্তির সকালে অভিমান করে চলে গেছে রোদ।
বাতাসের স্নায়ুতে ছিল মৌসুমী শিহরণ।
পুকুরের জলের কাঁপনে তুমি দেখেছিলে ময়ূর কলাপের মতো স্বপ্ন-রং ।
আঙুলে আঙুল রেখে বলছিলে-
আয় বৃষ্টি আয়।
ভিজবো ।
এবার ভিজবো।
মুখ কালো করে উন্মাদের মতো ,
তাকিয়ে ছিল আকাশ।
আমি তখন তোমার উৎসাহের খেই রেখেই বলছিলাম ‘ নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে ’।
দেখতে দেখতে-
বৃষ্টি নামলো ।
বৃষ্টি নামলো ।
তোমার চুলের ডগা থেকে বৃষ্টি ঝরছে।
নাকের ডগা থেকে বৃষ্টি ঝরছে।
কানের লতি হয়ে দুল থেকে বৃষ্টি ঝরছে।
আমি তখন কবি বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি!
তুমি অযাচিত ভাবেই বলতে লাগলে ‘ হৃদয় আমার নাচেরে আজিকে, ময়ূরের মত নাচেরে । শত বরণের ভাব উচ্ছ্বাস কলাপের মতো করেছে বিকাশ ’।
ভিজে গেল আমাদের ছাতা ।
জামরুল পাতা।
সমস্ত আবেগ।
পরনের কাপড়।
বৃষ্টি নামলো।
বৃষ্টি নামলো।
বৃষ্টি নামলো।
বিদ্যুৎ চমকে উঠল কোথাও!
শরীরের সমস্ত বিদ্যুৎ তখন এ্যাকুরিয়ামের মাছ।
কাঁচের দেওয়ালের ওপার থেকে
আমি শুধু মাছ খেলা দেখে গেছি,
আর বলেছিলাম সেই পদাবলী -
তুমি তখন সেই ভেজা হরিণীর মত শুনছিলে ।
‘ ঘন ঘন ঝন ঝন বজ্রনিপাত শুনিয়েতে শ্রাবণও মর্মে মরিজাতো’।
ভিজছি।
ভিজছি।
নিভৃত এই জন শূন্যতায়।
গাছ গাছ একলা নীরবতা।
শুধু এখানে দাঁড়িয়ে আছে,
আমাদের কিছু একান্ত অব্যক্ত কথা।
আমাদের কিছু প্রতিশ্রুতির বিজ ছড়িয়ে দিলাম। সেই রিতুমতি মাটিতে।
তারপর আবার ভিজছি।
আবার ভিজছি।
দৃষ্টি নামল।
বৃষ্টি নামলো।
ভাসিয়ে দিলাম কাগজের নৌকা,
ময়ূরপঙ্খী দীঘির জলে।
সব রাস্তাই ছিল ভেজা।
সব ঘাস ছিল ভেজা।
তোমার ভেজা আঙুল আর হাত ধরে-
হাঁটছি।
হাঁটছি।
শতাব্দী!
শতাব্দী !
তারপরেই তুমি বলছিলে,
যদি বৃষ্টি থামে।
যদি বৃষ্টি থামে।
যদি ধুয়ে যায় পায়ের ছাপ ।
যদি ডুবে যায় কাগজের শক্ত ডিঙা,
যদি নাচতে ভুলে যায় বর্ষা ময়ূর!
যদি নাচতে ভুলে যায় দেবলোকে বেহুলা!
তবু মনে রেখো
‘শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে,’
হাঁটছি, হাঁটছি।
ভিজছি, ভিজছি।
বৃষ্টি নামছে।
বৃষ্টি নামছে।
পরিচিতি:
মুহা.আকমাল হোসেন।জন্ম ২ রা জানুয়ারি-১৯৮১।গ্রাম ব্রহ্মোত্তর,পোষ্ট -ছোটসুজাপুর, জেলা- মালদহ।পেশায় শিক্ষক । ঐতিহ্যবাহী দেশ, দুই বাংলার একাধিক দৈনিক সহ' দু'শতাধিক ছোট পত্র পত্রিকায় লিখে চলেছেন কবিতা প্রবন্ধ ।কবিতার ভাষান্তর হয়েছে। প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় - প্রিয় কথায়। প্রকাশিত- কাব্যগ্রন্থ - বিস্রস্ত বাস্তবতা( ২০০৮), প্রেম,প্রিয়াপুষ্প ও পড়ন্ত বিকেল,(২০১০) কমরেডের ডাইরি (বুদ্ধ পূর্নিমা-১৪১৮), মিনারা হোসেনের ঘর উঠোন, (২০১২) ভাতের ঠিকানায় কাঁদে ভারতবর্ষ(২০১২ ১০,জানুয়ারি) পৃথিবীর একলা কমন রুম(২০১৫) ছেঁড়া কাফনের মেঘ (৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১) হামরা কলিয়াচকের লোক শেরশাবাদিয়া ভাষায় (২০২২,) কাঁথা কম্বলের কবিতা (২০২৩) অলিখিত দাম্পত্যের অপ্রকাশিত পদাবলী (২০২৩) কবি রফিকুর রহমানের কবিতার গৃহস্থালী (২০২৩ ডিসেম্বর) সম্পাদিত গ্রন্থ -গ্রাম মালদার কবিতা(২০১৩) |১৯৯৯ থেকে 'যাত্রিক' কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা করেন| এছাড়া গৌড়বঙ্গ সাহিত্য পত্রিকা' 'নয়া কাফেলা' পত্রিকার সহ সম্পাদক।পেয়েছেন একাধিক সাহিত্য সম্মান।
No comments