গল্প - অরূপকেতন, লেখক - ড. মনোরঞ্জন দাস
অরূপকেতন
মনোরঞ্জন দাস
সমর্পিতা সেন একটা এন. জি. ও- র সভাপতি।
সমর্পিতার দয়া, মায়া, ও করুণার কথা এ অঞ্চলের সকলের জানা। তার উদারতার কথা এ গ্রাম থেকে সে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে ইতিমধ্যে। সবাই জানে তার অনুশীলন ও কর্মধারায় এমন একটা মধুময়তা ও প্রীতির আবহ আছে , তা সকলকেই টানে। সবাই এটাও জানে, যে সে মঙ্গলময়ীর আধার। সমর্পিতার সার্বিক ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ।
প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে মোধপুর গ্রামে এসে সমর্পিতা গরীব প্রান্তিক বাচ্চাদের জামাকাপড়, বইখাতা, পেনসিল, কলম ইত্যাদি দিয়ে যায়। সে ছেলেমেয়েদের সব কিছু প্রদান করার পর, রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ায়।
সমর্পিতা দূরে দেখতে পায় দশ বছরের একটি ছেলেকে। জন্ম থেকেই তার দুটো পা-ই পঙ্গু,অসাড়। ছেলেটিকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দুই মাঝ বয়সী ভদ্রমহিলা ঠেলে নিয়ে আসছে সমর্পিতার দিকে।
সমর্পিতা ছেলেটিকে চিনতে পারে।
যে দু'জন ভদ্রমহিলা ছেলেটিকে হুইল চেয়ার ঠেলে নিয়ে আসছিল, তারা সমর্পিতার কাছে এসে দাঁড়ালো এবং হুইল চেয়ার ও সমর্পিতার দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো,' নমস্কার ম্যাডাম। আপণি হলেন সাক্ষাৎ এবং জীবন্ত দেবী। আপণি এই ছেলেটিকে যে হুইল চেয়ারটি দিয়েছিলেন , সেটা এটাই। ওর নাম অরূপকেতন। ও এখন আমাদের স্কুলে যায়। পড়াশুনা করে। এবার ও প্রথম হয়েছে। ও ভালো গান গায়, ছবি আঁকে। সবাই ওকে ভালোবাসে, প্রশংসা করে। ও এখন সঠিক জীবন পেয়েছে।প্রাণ পেয়েছে। গান গেয়ে বেশ রোজগারও করে। ওর বাবামা নেই। কাকা- কাকীমার কাছে থাকে।
সমর্পিতা অরূপকেতনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অরূপকেতনও।
সমর্পিতার চোখ থেকে জল ঝরে পড়ে। এ তার আনন্দাশ্রু। সমর্পিতার মনটা আনন্দে ভরে যায়।

