Sunday 30 June 2024

অণুগল্প - একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা, কলমে - শুভঙ্কর রায়চৌধুরী

 



         একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা

          শুভঙ্কর রায়চৌধুরী


          (সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

গত বছর মধ্যমগ্রামের রাসমেলা থেকে বাড়ি ফিরছি দমদম জংশন স্টেশনে। রিটার্ন টিকেট কাটাই ছিল। রাত নয়টায় এক নম্বর প্ল্যাটফর্মে পা রাখতেই নজরে এলো শিয়ালদহগামী একটা ডাউন ট্রেন হুড়মুড়িয়ে স্টেশনে ঢুকছে। আমি এবং আমার স্ত্রী প্রায় দৌড়ে শেষ কামরায় উঠলাম।রাসমেলার জন্য আজ প্রচন্ড ভীড় কামরায়।

দরজার মুখের যাত্রীদের আমরা অনেক অনুরোধ করলাম, আমাদের ভেতরে যাবার পথ করে দিতে। কিন্তু,কেউ এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে নারাজ। যদিও, যাত্রীদের অনেকেই নব ব্যারাকপুর নেমে যাবেন। একজন মাঝ বয়সী ভদ্রমহিলা আমার স্ত্রীকে বললেন:"দিদি, আমরা সবাই নব ব্যারাকপুর নেমে যাবো।পরের স্টেশনে। এরপর, আপনি স্বচ্ছন্দে দমদম পর্যন্ত সফর করতে পারবেন।"

আমি তবুও সুযোগ খুঁজছি ভেতরে যাবার। আমার তৎপরতা দেখে একজন ষাট ছুঁই ছুঁই পাকা- কাঁচা চুলের ভদ্রলোক বললেন:"দাদা,নিউ ব্যারাকপুর খালি হয়ে যাবে।একটু কষ্ট করুন।"

আমি বাধ্য হয়ে ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে রইলাম, কখন নব ব্যারাকপুর আসবে তার প্রতীক্ষায়। এবার ট্রেন নব ব্যারাকপুর স্টেশনে ঢুকতেই ওই ষাট ছুঁই ছুঁই ভদ্রলোক আমার সাথে জানোয়ারের মতো ব্যবহার করতে শুরু করলেন। আমাকে ধাক্কা দিয়ে প্ল্যাটফর্মে ফেলে দিয়ে ওনার ট্রেন থেকে নামার বীরত্ব দেখাতে চাইলেন। আমার এক হাতে ব্যাগ,অন্য হাতে আমি কোনোক্রমে ওপরের শিকল ধরে আছি।

      আমার গিন্নিও অন্যান্য যাত্রীদের ঠেলা ধাক্কায় বেসামাল। অভদ্র আচরণ করা লোকটি নেমে যেতেই পঞ্চাশোর্ধ এক মোটাসোটা মহিলা আমাকে ঠেলে ফেলে দেয় আর কি! আমার হাত শিকল থেকে মুক্ত করলে, অবধারিত প্ল্যাটফর্মে পড়ে আমার মাথা ফেটে যাবে! আবার নিচে নেমে দাঁড়াতে গেলে হাত যে সরিয়ে আনবো,তাও সম্ভব হচ্ছে না।কারণ,নব ব্যারাকপুরের ওঠা- নামার যাত্রীরা আমায় দুদিক থেকেই ঠেলছে। ভদ্রমহিলাকে কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছে না। উনি আমার শরীরের দিকে এগিয়ে আসতেই আমি কোনক্রমে বাঁ হাত উঁচু করে ওনাকে ঠেকালাম। তারপর অনেক কষ্টে নিচে নেমে প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ালাম। ভদ্রমহিলা ও নামলেন।নেমেই আমাকে চার্জ করেলেন:"আপনি,কোন সাহসে আমার গায়ে টাচ করেছেন?কি ভেবেছেন আপনি নিজেকে!"

"আপনি, কি সব আজেবাজে কথা বলছেন?

উনি হাত উঁচিয়ে বললেন:"একটা চড় কষে মারবো, আপনার গালে?"

   আমার গিন্নি আমার আগেই প্ল্যাটফর্মে নেমে দাঁড়িয়েছিল।ও এগিয়ে এসে বলল:"অসভ্য মহিলা কোথাকার! আমার স্বামীর গায়ে হাত দিলে,আমিও আপনাকে দু চড় কষিয়ে মারবো।কি ভেবেছেন আপনি নিজেকে? মহিলা হয়ে সুযোগ নিচ্ছেন?ওতোই যদি আপনার ছুঁত মার্গ থাকে,লেডিজ কামরায় উঠলেন না কেন?ঐ কামরা তো খালিই ছিল।"

       ইতিমধ্যে গাড়ির হুইসেল বেজে ওঠে। আমরা দুজনে ট্রেনে উঠি। ট্রেন হুহ করে ছুটে চলে। আমার সর্বাঙ্গ তখনও ভয়ে উত্তেজনায় কাঁপছে। আমি গিন্নিকে বললাম:"তোমার জন্য আজ আমি গণধোলাই থেকে বেঁচে গেলাম!আজ ঐ অভদ্র মহিলা আমার গায়ে হাত তুলতো।আর পাবলিক মহিলার কথায় বিগলিত হয়ে সত্য- মিথ্যার বিচার না করে, আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত।"

"দেখলে না, আমি এগিয়ে আসতেই ছেলেরা পিছিয়ে গেল!

"এই সব মহিলারা লেডিস কামরা খালি থাকলেও কেন যে পুরুষদের ভীড়ে ঠাসা কামরায় ওঠে? "

"এরা সিন ক্রিয়েট করতে ভালোবাসেন।"

"আমি বলি কি- পুরুষদেরও উচিত কোনো মহিলার কথা চট করে বিশ্বাস না করে ঘটনার গভীরে যাওয়া।নইলে,একজন নির্দোষ পুরুষ জনতার দ্বারা যে কোনো সময় আক্রান্ত হতে পারেন!"

       ইতিমধ্যে, ট্রেন এসে দমদম স্টেশনে দাঁড়ালো। রাসমেলা থেকে লোকাল ট্রেনে বাড়ি ফেরার এক তিক্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে বাড়ির পথে পা বাড়ালাম।

           ............ সমাপ্ত.................


1 comment:

  1. কতো বড়ো জানোয়ার কিছু মহিলা এই লোকাল ট্রেনে যাত্রা করে, শুধু তারাই ভুক্ত ভোগী যারা কলকাতার লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করে, বিশেষত মহিলারা নিজেদের মহিলা হওয়ার সুযোগ নেয়। এরা মানুষ জাত না, জানোয়ার এরা।

    ReplyDelete

কবিতা - হুল বিদ্রোহ, কলমে - সঞ্জয় বাস্কে, পুরুলিয়া

  হুল বিদ্রোহ  সঞ্জয় বাস্কে, পুরুলিয়া  সিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরব এগিয়ে ছিল  সাঁওতাল জাতি সাথে ছিল। সবার থেকে আগে  হুল হুল বলে চিৎকার করেছিল।...