Header Ads

দীপ্ত হৃদ মতিন - এর একগুচ্ছ কবিতা

 



যেন কবরস্থান 

দীপ্ত হৃদ মতিন

বাংলাদেশ 


আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আমার ভেতরের কবি 

আজ তুমি কোথায় এসেছো,কিছু টের পাচ্ছো কি!

থমকে দাঁড়িয়ে গেছি, ফটকের খুবই কাছাকাছি, 

মনে হলো, এখানে কোনো ছায়াবৃক্ষ মোটেই নেই, 

ক্লান্ত পথিকের সবুজ আশ্রয় নেই,বিরাট মরুভূমি, 

প্রায় তেত্রিশ বছরের নিতান্তই ক্লান্ত পথিক আমি।

মানব জীবনের ভেতরের আর এক কর্মজীবনের 

সদ্য অবসান হয়েছে, সদ্য প্রয়াতের গোরস্থানে 

যেনো আমি এসেছি। জীবনের হিসেব কিছু বাকি!

সত্যি তাই, জীবনের কিছু হিসেব কষতেই এসেছি! 

এতো বছরের পরিচিত বিশাল বড় বড় দালানগুলি

মনে হলো নিষ্প্রাণ, এখানে কোথাও কেউ নেই, 

আজ কারো কাছে আমার কোনো প্রয়োজন নেই।

জীবনের সবকিছুর প্রয়োজন এভাবে ফুরিয়ে যাবে,

আমরা হবো,গোরস্তানের এমন সব জিন্দা লাশ, 

ক্ষমতাধর বড় আসনে বসে কেউ বুঝেনি কখনো, 

কলমের সবটুকু আলো  একেবারেই নিভে যাবে। 

আলো নিভে গেলে ঘোর অন্ধকার, বন্ধ পারাপার।

সত্যি আজ আমি এক গোরস্থানে যেন এসেছি, 

আমি আজ অন্য এক রকম সচিবালয়ে এসেছি।।

  _______


জীবনের ভারসাম্য! 

  দীপ্ত হৃদ মতিন। 


মনকে বলি তুমি এতটা ভারাক্রান্ত হয়ো না!

দুঃখ যেমন আছে সুখ শান্তিও সঞ্চিত আছে ! 

জীবনে সুখ দুঃখের পালাবদল রয়েছে! 


অন্তর্দৃষ্টিকে বলি তুমি একদিকে দৃষ্টি দিও না, 

জীবনের চারপাশে ঘুরে ফিরে প্রদক্ষিণ করো,

তুমি চলে যাও সুখের অতীতে,যেখানে দেখবে 

সোনালী আলো জ্বলজ্বল করে আজো!

অসংখ্য সুখের স্মৃতি রয়েছে, রোমন্থন করো!

দুঃখের স্মৃতিগুলো ঘোর অন্ধকার মেঘাচ্ছন্ন 

আকাশের মতো! থেমে থেমে বারিধারা বর্ষে! 


স্বজনের মৃত্যুর চেয়ে অতি দুর্বিষহ দুঃখের স্মৃতি 

পার্থিব এ জীবনে আর কি হতে পারে! 

রয়েছে মা'য়ের মৃত্যু, পিতার মৃত্যু,স্ত্রীর মৃত্যু 

আরও অনেক ঘনিষ্ঠ স্বজনের মৃত্যু! 

প্রতিটি মৃত্যুর দুঃখভার হিমালয়ের মতো! 


মন তুমি কোনো একটি দুঃখের স্মৃতির দংশনে 

চৈতন্যকে অবশ করে রেখোনা,অস্থির থেকো না! 

সকল দুঃখ কষ্টগুলোকে সাজিয়ে রেখে দাও! 

সুখের মধুর স্মৃতিগুলো পাশাপাশি রেখে দাও! 

মন তুমি এতোটা ভারাক্রান্ত হয়ো না!

প্রতিটি মৃত্যুর পাশাপাশি সুখের স্মৃতিগুলো

স্মরণ করো,মনে ভারসাম্য আসবে! 

জীবনের জন্য জীবনের ভারসাম্য আবশ্যক!।

_______


যাতনায় কাব্যিক সুখ আছে। 

দীপ্ত হৃদ মতিন। 


জীবনের নিষ্ঠুর বাস্তবতার দুর্বিষহ যন্ত্রণার

অনুভূতিগুলো হৃদয়ের নরম প্রকোষ্ঠে পুঞ্জিভূত

হিমালয়ের বরফ স্তুপের মতো! 

আমি জানি প্রকৃতি এখানে হেরে যাবে 

প্রকৃতির কাছে এমন উষ্ণতা নেই, 

সে এ জীবনে বরফ গলাতে পারবে না! 

গলিত প্রবাহের ধারা ঝর্ণার কলতানে

নীরব পাহাড়ের হৃদয়ে সুর ছড়াবে না কখনো! 


কর্তিত বৃক্ষ কখনো কি পল্লবিত, বিকশিত হয়! 

বৃন্তচ্যূত পুষ্প কি কভু সুরভি ছড়ায়! 

যে চলে যায় চিরতরে, আর কি ফিরে আসে! 

তবুও অসীম নীলিমার ওপারে চেয়ে চেয়ে 

প্রতীক্ষার প্রহর গুনে গুনে স্মৃতির সরোবরে

অবগাহন করা! 

পাঁজরের ভেতরের পেন্ডুলামের 

সকরুণ কান্না লালন করা! 

নিভৃতের সমস্ত চৈতন্য দিয়ে 

কষ্টের দহন যন্ত্রনা অনুভব করা! 

এ যাতনায়ও অব্যক্ত কাব্যিক সুখ আছে!

______


    একমাত্র ভরসা। 

     দীপ্ত হৃদ মতিন। 


হৃদয় আজ সহসা একি কথা বলে, 

কি হবে এভাবে আর কবিতা লিখে! 

যতো অশ্রুর প্লাবন আসে আসুক, 

নীরবে দুকূল ছাপিয়ে যেতে দাও! 


তপ্ত নিঃশ্বাসের প্রবাহে সবুজ পাতাগুলো 

নীরবে ঝরে পড়ে যেতে দাও!

বিরান ভূমির কাহিনি লিখতে যেও না! 

অকস্মাৎ বজ্রপাতে ঝলসে যাওয়া 

তামাটে বৃক্ষের করুণ কাহিনি 

তুমি কখনো লিখতে যেও না! 


আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে দিগভ্রান্ত

পালিয়ে বেড়ানো নিরাশাচ্ছন্ন

কারো কাব্যকথা লিখতে যেও না! 

জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া 

কোস্টাল এলাকার করুণ কাহিনি 

তুমি লিখতে যেও না! 


ভূমিকম্পে লন্ডভন্ড নগরীর 

ধ্বংসের কাহিনি লিখতে যেও না! 


সমরাস্ত্রের অতর্কিত হামলায় বিধ্বস্ত 

শান্ত লোকালয়ের নিরীহ মানুষের

হৃদয় বিদারক হতাহতের

রক্তাক্ত করুণ কাহিনি 

লিখতে যেয়ো না বোকা কবি! 



আজ মানুষের পাশে মানুষ নেই! 

চারপাশে মানবতার চরম দুর্ভিক্ষ! 


কবি তোমার এসব কথা 

প্রকৃতিকে বলো,

সে তোমার ভরসার আশ্রয়, 

মহা জগতের মালিক যিনি, 

তোমার একমাত্র ভরসা তিনি!

_______


আমি ভাবতে পারি না। 

   দীপ্ত হৃদ মতিন। 


ভাবতে পারি না জীবনে আমাদের আর কথা হবে না, 

ভাবতে পারি না জীবনে আমাদের আর দেখা হবে না, 

ভাবতে পারি না তুমি আর কখনো ফিরে আসবে না! 


যদি জানতাম সেটাই হবে আমাদের শেষ দেখা , 

তবে পৃথিবীর সমস্ত আলোকে আঁখি পরিপূর্ণ করে  

নয়নের সমস্ত দৃষ্টিশক্তি দিয়ে অনুভবের রশ্মিতে 

অপলক দৃষ্টিতে তোমাকে মনভরে  দেখে নিতাম! 


আমার চলে আসার সময় স্বর্গীয় অনন্য মমতাময়ী

কন্ঠে বলেছো "অনেক রাত হয়েছে গিয়ে শুয়ে পড়ো"

আইসিইউতে বেড-১৪, তোমাকে রেখে এসেছিলাম! 

তখন আমরা কেউ কি ভেবেছি সেটাই হবে তোমার 

জীবনের শেষ উক্তি! এবং আমাদের শেষ দেখা! 

যদি জানতাম নশ্বর পৃথিবীতে সেটাই হবে শেষ কথা, 

আমি নিশ্চয়ই বলিষ্ঠ আশায় আশ্বস্ত করে আসতেম, 

'দেখা হবে নীলিমার ওপারে,অনন্ত এক অভিসারে!

ততোদিনে তুমি ভালো থেকো, নিরাপদে থেকো! ' 


আজ হৃদয়ের আতুরঘরে হাজার কথার অপমৃত্যু হয়,

যেদিকেই তাকাই, সবকিছুই শুধুই নিষ্প্রাণ,পাথরময়!  

স্মৃতি রোমন্থনের যন্ত্রণায় আমার পাঁজর ভেঙে যায়! 

আজ কোথায় পাবো একটু শান্তির নিরাপদ আশ্রয়! 


পবিত্র ভালোবাসায় যতোটা পরিপূর্ণ করে রেখেছিলে

ততোধিক রিক্ততার যন্ত্রণায় নিরন্তর এই হৃদয় জ্বলে। 

         _________


সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ

★কবি দীপ্ত হৃদ মতিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান)সহ এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর ইন এডুকেশন এবং প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেনীসহ এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেছেন। 

  ★তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট পদে ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীতে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছিলেন।তিনি বিগত ২০২০ সালের ২০'সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (যুগ্ম সচিব) পদে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে সরকারি নিয়ম মোতাবেক যথারীতি সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন। 

★সরকারি চাকরিতে প্রবেশের পর চীনের বেইজিং এডম্যানিস্ট্রেটিব কলেজ , সিঙ্গাপুর সিভিল সার্ভিস কলেজ, চীনের ইউহান বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স করেছেন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত ও শ্রীলঙ্কা একাধিকবার ভ্রমণ করেছেন। 

★কবি মতিন বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় কবিতা লিখেন এবং নিজের কবিতা আবৃত্তিও করেন।তাঁর রচিত ইংরেজি কবিতা শ্রীলঙ্কার নিউজ লেটারে ২০১৪ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে।শ্রীলঙ্কা থেকে প্রকাশিত "The Island " ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় তাঁর ইংরেজি কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। সুইডেন থেকে প্রকাশিত অনুশীলন সাহিত্য ম্যাগাজিনে তাঁর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলা কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা দৈনিক ঠিকানা ও বর্ণমালা পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় ও সাহিত্য ম্যাগাজিনে অনেক কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। 

★বিশ্বে ইংরেজি কবিতার জগতে তিনি সুপরিচিত। Honorary Doctorate Degrees, Peace Ambassador, Global poet, Rahim Karim World Literary Award উল্লিখিত ডিগ্রি, সম্মাননা পুরষ্কার ছাড়াও বিশ্বের স্বনামধন্য সাহিত্য ও মানব সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সম্মানসূচক সদস্যপদ অর্জন করেছেন। 

★ কবি মতিন " Universal creative portal for sustainable humanity and peace " Group এর প্রতিষ্ঠাতা।বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার স্বনামধন্য অসংখ্য কবিগণ নিজের ভাষার কবিতা পোস্ট করেন।কবি মতিন এ পর্যন্ত অসংখ্য কবির জীবন ও সাহিত্য কর্মের বিষয়ে পর্যালোচনা উপস্থাপন করেছেন। 

★কবি মতিন পিতা হাজী মো: আছমত আলী, মাতা আলহাজ্ব রাজিয়া বেগমের ঔরসে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলাধীন কালাপাহাড়িয়া গ্রামে ১৯৬১ সালের ২১ সেপ্টেম্বরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।২১ সেপ্টেম্বর কবির জন্ম ও বিবাহের তারিখ। 

★তিনি বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করছেন।তাঁর স্ত্রী রেহান বানু (প্রয়াত) বড়ো পুত্র -মুরতাজ আল মুকসিদ কবির সঙ্গে আছেন। ছোট ছেলে নাহিয়ান আল সাবরি কানাডায় অধ্যয়নরত।

★ কবি মতিন বিগত হজ্জ মৌসুমে পবিত্র হজ্জব্রত পালন করেছেন। 

★এ পর্যন্ত প্রকাশিত কবিতার বইঃ

*অর্পিত প্রেম 

*বিমূর্ত ভালোবাসা

*হৃদপিন্ডের আবৃত্তি 

*মনের রঙ তুলি

*মানচিত্রে দাবানল 

*কবিতার প্রয়াণে কবিতা 

★ভ্রমণ কাহিনিঃচাঁদের নতুন আলো 

তারিখ :১৫ অক্টোবর '২০২৩ খ্রি.

No comments

Powered by Blogger.